মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। তাদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির উদ্যোগে কর্মিসভা ও সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, আমরাও সংস্কার চাই, এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কিন্তু এই যে তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি) যেটা দিতে চায়, সেটা আমাদের না দিলেও আমরা তা কোনো না কোনোভাবে পেয়েছি। সেখানে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ঘাড়ে চাপছে ’৭১-এ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা। আকারে ইঙ্গিতে তারা বলতে চায় ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গরু-ছাগল রক্ত দিয়েছে, নাকি মানুষ রক্ত দিয়েছে? ’৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তাদের ছবক শুনতে জাতি রাজি না।
তিনি বলেন, আমরা অনেককেই ক্ষমা করতে পারি, ভুলে যেতে পারি। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমা করার পর একই কাজ যদি আবার করেন, তাহলে ভুলে গেলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। সেই নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য নেতৃত্বও আছে। জিয়াউর রহমান হারিয়ে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই জায়গা থেকে শুরু করেছেন। সেখান থেকেও নেতৃত্ব হিসেবে এসেছে তাদের যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান। যুক্তরাজ্য থেকে দল ও দেশবাসীকে সংগঠিত করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এর ফলাফল যতক্ষণ পর্যন্ত গোলায় না ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সক্রিয় আছেন আমরাও সক্রিয় আছি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ তো বারবার হবে না, অমরা সেই যুদ্ধটা করতে পেরেছি। সেই ডাকটাই দিয়েছিল রাজনীতির বাইরের একজন মেজর তার নাম জিয়াউর রহমান। যার নাম মানুষের অন্তরে অন্তরে। যে আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আশা পূরণ হয়নি বলেই তো আওয়ামী লীগের এমন পরিণতি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই কিন্তু সরকার গঠন করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোসতাক। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার সংগঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন। ১৯৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারের পতন; এসব কি ইতিহাসের অংশ নয়? এসব কি ইতিহাসের পাতা থেকে বের করে দেবেন? স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ছিল। তারা কি রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছিল?