সাবেক এমপি নাসিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ, পাচার ও বিদ্যুৎখাত ধ্বংসের মাফিয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রটোকল অফিসার ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। জুলাই-আগস্টে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফেনীর মহিপালে তার নির্দেশে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তবুও দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেই তার বিরুদ্ধে। মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে অনেকের নামে মামলা হলেও এখনো সেখানে আলাউদ্দিন নাসিমের নামে কোনো মামলা হয়নি। হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তার বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে।

মাফিয়াদের গডফাদার আলাউদ্দিন নাসিম প্রায় সময়ই দম্ভ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কেউ তার কিছু করতে পারবে না। কারণ তার নিয়োগ দেয়া অনেকেই এখন এই সরকারের ভালো পজিশনে আছে। বিএনপিতেও রয়েছে তার সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন নেতা। তাই দেশে যে সরকারই আসুক তিনি সব সময়ই থাকবেন ধরা ছোয়ার বাইরে। এখন প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতির বরপুত্র আলাউদ্দিন নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়? কারা তাকে রক্ষা করছে? এখন কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? এদিকে, ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করে চলছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। অবৈধভাবে ভারতের কলকাতা পালিয়ে পতিত হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন নাসিম। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভারতের ভূইফোড় মিডিয়ার গুজব প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সামনে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন তিনি।

আলাউদ্দিন নাসিমের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের গুজব সেল। কারণ হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার আলাউদ্দিন নাসিম। দুই বোনের চোরাই টাকা তার জিম্মায় রয়েছে। আর সেই অর্থ ব্যয় করছে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ করার মিশনে। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ফান্ডিং করছেন দুর্নীতিবাজ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বাংলাদেশ থেকে যারা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন তাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় তদারকি করছেন দুর্নীতির বরপুত্র ও দেশের অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন নাসিম। আওয়ামী লীগ নেতাসহ কর্মীদের নিয়ে নাসিমের মাস্তি করার একটি ভিডিও এর আগে ভাইরাল হয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর বিদেশে বসে যারা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে অন্যতম রেহানার ফান্ড ম্যানেজারখ্যাত ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

আলাউদ্দিন নাসিম এক সময় ছিলেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এর বাইরে শেখ রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ- কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করেছেন এই সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য। নাসিমের হাত ধরেই পরিচালিত হতো দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ঢাকায় মদের ব্যবসা এবং ফেনীতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্বর্গরাজ্য গড়েন। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সূত্রমতে, নাসিম ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এছাড়া কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। নাসিমের হাত ধরে দেশে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় বিনা পুঁজিতে ব্যাবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য, আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন। ২০ বিঘা জমির ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে চারটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেয়া হয়।