ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কয়ছরের বিরুদ্ধে আ.লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ

যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কয়ছরের বিরুদ্ধে আ.লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ

যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন নিয়ে যুক্তরাজ্যে ও জগন্নাথপুরে তোলপাড় চলছে। যুক্তরাজ্য ও জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাধারণ নেতাকর্মীরা কয়ছর এম আহমদকে তার পদ থেকে অপসারণ করার দাবি উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, সুনামগঞ্জ ৩ আসন তথা জগন্নাথপুর আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী, এম এ মান্নানের সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা শীতাব খানসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীকে খোলশ পালটিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে গতকাল দেখতে নিয়ে যান কয়ছর এম আহমদ। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারর তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করাতে চেষ্টা করেন কয়ছর এম আহমদ। অসুস্থ চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার ক্লিনিকের সামনে আওয়ামী লীগের এই সব নেতাদের নিয়ে কয়ছর এম আহমদ বৈঠক করেন। যার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কয়ছর এম আহমদের ছবি ও ভিডিও দেখে চরম ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য কয়ছর এম আহমদের বহিষ্কার দাবি করছেন।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতা মনে করছেন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমানে একটি সংকটময় মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দলের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে, যা দলের স্থিতিশীলতা এবং আদর্শকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশেষত, বিএনপি ইউকে শাখার সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলকে একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার দিকে আহ্বান জানাচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে রয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে তৎপর ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।

বিতর্কিত সাক্ষাৎ এবং ক্ষোভের সঞ্চার : কায়ছর এম আহমেদ ও তার সহযোগীরা, যেমন আওলাদ হুসাইন, কবির আহমেদ, শুজাতুর রেজা এবং নিক্সন, তারেক রহমান এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শীতাব খান-এর মধ্যে একটি আলোচিত বৈঠকের আয়োজনের অভিযোগের মুখে রয়েছেন। এই বৈঠকটি লন্ডনের সেই ক্লিনিকের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন।

প্রাপ্ত আলোকচিত্র এবং প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শীতাব খান, যিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের (যেমন মান্নান এমপি এবং সিদ্দিক আহমেদ) ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, এই বৈঠকটি বিএনপির সাথে তার মিথ্যা সংশ্লিষ্টতা দেখানোর জন্য ব্যবহার করেছেন। এমন কার্যকলাপ বিএনপির আদর্শগত ভিত্তিকে দুর্বল করে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অর্থনৈতিক লেনদেন ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ : কায়ছর এম আহমেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শীতাব খানের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, যা এই বিতর্ককে আরো গভীর করেছে। সমালোচকরা দাবি করছেন, কাইসার আহমেদ ও তার দল বিএনপির অবস্থানকে ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের জন্য ব্যবহার করছেন, যা দলের নীতির পরিপন্থি এবং দলের সমর্থকদের আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ কয়ছর এম আহমেদের পদত্যাগ বা অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি তুলেছে। তার অভিযোগিত কর্মকাণ্ড শুধু দলের আদর্শের পরিপন্থি নয়, এটি দলের নেতৃত্বের প্রতি জনআস্থার ক্ষতিসাধন করছে। বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ণ রাখতে, তারেক রহমানের এই ধরনের আত্মসাৎকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

তারেক রহমানের নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা বিএনপির সর্বাধিক প্রভাবশালী নেতা এবং ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারেক রহমান বারবার দলের মূল্যবোধ এবং দেশের মানুষের প্রতি তার অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছেন। তবে এই পরিস্থিতি তার নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আত্মসাৎকারী উপাদানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং দলের নৈতিকভিত্তি সুসংহত করবে।

বিএনপির এখন প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জাতির সেবায় নিজেদের মনোযোগ পুনরায় স্থাপন করা। কাইসার আহমেদের মতো ব্যক্তিদের দল থেকে অপসারণ করে তারেক রহমান একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে পারেন যে, বিএনপি তার আদর্শ এবং দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি অবিচল। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন আওয়ামী লীগ নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কাজ করছে, তখন বিএনপির জন্য স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারেক রহমানকে নিশ্চিত করতে হবে যে, বিএনপির নেতৃত্ব লোভ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকে, যা দল এবং দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য মাইলফলক স্থাপন করবে। এটি সাহসী সিদ্ধান্ত এবং নীতিগত নেতৃত্বের সময়। এই চ্যালেঞ্জে তারেক রহমানের প্রতিক্রিয়া শুধু বিএনপির ভবিষ্যতই নয়, বরং একজন নেতা হিসেবে বাংলাদেশের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়ার তার উত্তরাধিকারের উপরেও প্রভাব ফেলবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত