ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক আবারো বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে ‘হয়রানিমূলক’ প্রচারণার অভিযোগ এনেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন বলে গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। টিউলিপ সিদ্দিক স্কাই নিউজকে বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশ্নের জবাব দিতে তার আইনজীবীরা প্রস্তুত। বাংলাদেশের প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ ও প্লট-সম্পদ নিয়ে ‘অনিয়মের’ অভিযোগে নাম আসা নিয়ে গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ একটি পোস্ট দেন টিউলিপ।
এতে টিউলিপ লেখেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে আমার আইনজীবীরা ভিত্তিহীন অভিযোগের তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তাদের যে কোনো আইনসিদ্ধ প্রশ্ন দ্রুত তার কাছে পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন। জবাব দেয়ার সেই সময়সীমা শেষ হলেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো প্রশ্ন পাঠায়নি কিংবা উত্তর দেয়নি। উল্টো তারা সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দাবি নিয়ে আমাকে ‘লক্ষ্য করে ভিত্তিহীন হয়রানি প্রচার চালাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করে গত ২০ মার্চ টিউলিপ সিদ্দিক উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রচার চালিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। সেদিন বিবিসি তার আইনজীবীদের চিঠির বরাতে বলেছিল, সংবাদমাধ্যমে বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে, কিন্তু তার (টিউলিপ) বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনেননি অনুসন্ধানকারীরা।
চিঠিতে দুদকের উদ্দেশে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে অবশ্যই দ্রুত প্রশ্ন রাখতে হবে এবং সেটা যে কোনো পরিস্থিতিতে ২৫ মার্চের মধ্যে। না হলে আমরা ধরে নেব, জবাব দেয়ার মত কোনো বৈধ প্রশ্নের সুযোগ নেই। বিবিসি লিখেছে, দুদক টিউলিপের আইনজীবীদের চিঠির একটি জবাবও দিয়েছে। দুদক বলছে, টিউলিপ তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের ‘কুখ্যাত দুর্নীতিগ্রস্তদের’ সঙ্গে কাটিয়েছেন, যা প্রমাণ করে তিনি দলের দুর্নীতি থেকে সুবিধা নিয়েছেন। দুদকের একজন মুখপাত্র জবাবে বলেন, শেখ হাসিনার শাসনের চরিত্র সম্পর্কে তার না জানার দাবির বিষয়টি অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। দুদক ‘যথাসময়ে’ তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। লন্ডনে ‘বিনে পয়সার ফ্ল্যাট’ নিয়ে তদন্তের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ এ বিষয়ে বুধবার এক্সে পোস্ট দেন। এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিক স্কাই নিউজকে বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশ্নের জবাব দিতে তার আইনজীবীরা প্রস্তুত। বাংলাদেশি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য তিনি অনুতপ্ত কিনা জানতে চাইলে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, আপনি আমার আইনি চিঠিটি কেন দেখেন না এবং দেখেন না যে আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আছে কি না... (বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ) একবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এবং আমি তাদের কাছ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করছি। বাংলাদেশে দুর্নীতির একাধিক তদন্তে নাম আসার পর লন্ডনের এই এমপি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মূলত দুর্নীতির দায়ে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এই সিটি মিনিস্টার।
শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠের থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগের মুখে একপর্যায়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন টিউলিপ। সরকার ছাড়ার পর প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, কয়েক মাস ধরে (দুর্নীতির) অভিযোগ আসছে এবং কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।