মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার না হলে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাতকে প্রতি মাসে গড়ে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এতে প্রায় এক হাজারটি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ শুল্ক প্রত্যাহারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের নেতারা। বিজিএমইএ নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর উত্তরায় জায়ান্ট বিজনেস টাওয়ারে সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনি অফিস উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই।’ তবে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘৯০ দিনের সময়সীমা শেষে আমরা যেন আবারও এ শুল্কের মুখোমুখি না হই, সে লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা যেন সরাসরি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।’
আবুল কালাম বলেন, ‘শুল্ক চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার না হলে তৈরি পোশাকখাতকে প্রতি মাসে গড়ে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক দিতে হবে। এ খাতে উদ্যোক্তারা গড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি মুনাফা করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাধারণত শুল্ক পরিশোধের দায়িত্ব ক্রেতার হলেও বর্তমান বায়িং প্যাটার্ন অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ক্রেতারা অতিরিক্ত খরচ সরবরাহকারীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বিজিএমইএ নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ এর সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ফারুক হাসান বলেন ‘আমরা যে শিল্পের ধারাবাহিক সাফল্য দেখছি, তার পেছনে সম্মিলিত পরিষদের অবদান অপরিসীম।’ তিনি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে (এলডিসি) বাংলাদেশের উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। আমেরিকান বাজারে শুল্ক কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি শুল্ক আরোপ পারস্পরিক হতো, তবে আমাদের ওপর শুল্ক আরও কমে যেত। বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্কারোপ করেছে। শুধু আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি সমাধান সম্ভব নয়, তবে আমরা আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। সরকারকে এ বিষয়ে কোনো অযাচিত প্রতিশ্রুতি না দেয়ার অনুরোধ জানাই।’ বিজিএমইএর আগামী নির্বাচনে জয়লাভে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য আসিফ আশরাফ এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম।