ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে ৬ মাস সময় পেল টাস্কফোর্স

* সাগর-রুনি হত্যার নথি আগুনে পোড়েনি, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না * সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় : ডিএমপি
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে ৬ মাস সময় পেল টাস্কফোর্স

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে সরকার গঠিত টাস্কফোর্সকে ছয় মাস সময় দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নাজীব ও বিচারপতি সিকদার মোহাম্মদ রাজির হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। তিনি আদালতকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বদলি বা রদবদল হয়েছে এবং এত বছরে বহু নথি হারিয়ে গেছে বা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব নথি খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং এর জন্যই তদন্ত শেষ করতে আরও সময় প্রয়োজন।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছ থেকে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তৈরি শক্তিশালী টাস্কফোর্সকে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

এই টাস্কফোর্সকে ছয় মাসের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার নিউজ এডিটর সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন।

ঘটনার সময় তাদের পাঁচ বছর বয়সি ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বাসায়ই ছিলেন। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় কোনো সন্দেহভাজন আসামির নাম উল্লেখ না করে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে থাকা সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র পুড়ে যায়নি, এগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার তদন্ত নিয়ে শুনানির পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, তা সঠিক নয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরোনো নথি ও ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ। তিনি জানান, রাষ্ট্রপক্ষ ৯ মাস সময় বৃদ্ধির কথা বললে বাদীপক্ষে আইনজীবী শিশির মনির ৩ মাস বৃদ্ধির কথা বলেন। আদালত ৬ মাস বৃদ্ধির মৌখিক আদেশ দেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২১ মে ধার্য করেন আদালত। এ নিয়ে ১১৭বার পেছায় প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলাটির তদন্তভার নেয় পিআইবি। মামলার আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির ২ নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের বন্ধু তানভীর রহমান খান। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আটক।

অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আংশিক আগুনে পুড়ে গেছে বলে যে তথ্য জানানো হয়েছে তা সঠিক নয়।

তিনি জানান, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত