ফিরে দেখা ২০২২
বছরজুড়ে যোগাযোগ উন্নয়নে মহাযজ্ঞ
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফারুক আলম
রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অর্থনৈতিক মন্দাসহ সব বাধা অতিক্রম করে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়েছে সরকার। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল থেকে শুরু করে সারা দেশে ১০০ সেতু ও ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধন করা হয়েছে বিদায়ী বছরে। ইতিহাসের পাতায় ২০২২ সাল মাইল ফলক হিসেবে থাকবে।
যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। যোগাযোগে উন্নতি এলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সড়কপথ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়। তবে এই উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অর্থায়ন গুটিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক। তবে দুর্নীতির এই অনুমাননির্ভর অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে নিজস্ব অর্থে বিপুল সম্ভাবনাময় পদ্মা সেতু নির্মাণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শিতার কারণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নেয়। ২০২২ সালের ২৫ জুলাই মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যমে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা বিস্তৃত হয়। ২১টি জেলাকে যুক্ত করে পদ্মা সেতু। সেতুর অভাবে এত বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বড় কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। পদ্মা সেতু নির্মাণে এসব অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণের ভেতর আত্মিক সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আর্থিক হিসাবের চেয়ে অনেক বড়। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বিজয় ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক। এরমধ্য দিয়ে দেশের গৌরব, সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর পর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশে আরেকটি নতুন মাইল ফলক মেট্রোরেল। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যোগাযোগ খাতে নতুন এই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়, যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এসব প্রকল্পে যেমন বদলে যাবে ঢাকা, তেমনি মানুষের দুর্ভোগও কমবে। আর গত বুধবার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে এমআরটি লাইন-৬ এর মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকায় মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০১২ সালে। ১০ বছর পর আংশিকভাবে চালু হয়েছে। আর ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেলের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের লাইন-৬ এর খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা দিচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর সরকার এই প্রকল্পে খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের ঠিক কয়েক দিন আগেই ৫০টি জেলায় ১০০ সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের একটি মাইলফলক। এরমধ্য দিয়ে দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় ব্যবসা, অর্থনীতি, কলকারখানার প্রসার ঘটবে। জাতীয় জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও ২ হাজার ২১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ৭০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে । ৮৭৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নবনির্মিত সেতুগুলো রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এগুলো ৩৩টি রুটে ফেরি পরিষেবা মুক্ত করেছে, যা সড়ক যোগাযোগকে দ্রুত, সহজতর ও নিরাপদ করছে। সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ৪৬টি, সিলেটে ১৭টি, বরিশালে ১৪টি, ঢাকা ও রাজশাহীতে ৭টি, ময়মনসিংহে ৬টি ও রংপুর বিভাগে ৩টি। ১০০টি সড়ক-মহাসড়কের মধ্যে ৯৯টি সরকারি তহবিল থেকে সম্পন্ন হয়েছে, বাকি একটি এবং ৭০ কিলোমিটার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মহাসড়ক পর্যন্ত ৬ হাজার ১৬৮ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এডিবি, ওপেক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (আবুধাবি) তহবিলের আওতায়।