ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্দা উঠল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার

পর্দা উঠল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত স্থায়ী ভেন্যু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেলার স্থায়ী ভেন্যুতে বসল বাণিজ্য মেলা।

এবারের মেলায় প্রদর্শনী কেন্দ্রের দুটি হল ছাড়াও বাইরের প্রাঙ্গণে স্টল প্যাভিলিয়ন ও রেস্টুরেন্টসহ ৩৩১টি স্থাপনা রয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরে মহামারির কারণে সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলাম। তবে ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমি ছিলাম। এজন্য এখানে আসার আগ্রহ বেশি।

তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তির প্রসঙ্গে বলেন, এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর করার জন্য এরইমধ্যে আমরা বিভিন্ন কমিটি করে কোন খাতে আমাদের কি কি করণীয় সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।

মহামারি করোনা আর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা তখনও ‘সচল রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। এছাড়াও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বণিক সমিতির প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা। এবারের মেলা থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি স্পট অর্ডার পাওয়ার আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা শেরেবাংলা নগরে হয়। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা হয়নি। এরপর ২০২২ সালে কোভিডের বিধিনিষেধের মধ্যেই পূর্বাচলে প্রদর্শনীর স্থায়ী কাঠামোতে প্রথমবার মেলা বসে।

এর আগে গত শনিবার দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মেলা প্রাঙ্গণ বিবিসিএফইসি’র মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, এবার ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব দেশের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ১৮টি।

প্রদর্শনী কেন্দ্রের ভেতরে হল এ-তে ৮৪টি এবং হল বি-তে ৯০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রদর্শনী হলের সামনে ও পেছনে প্যাভিলিয়ন ৫৭টি। পেছনের মাঠে রেস্টুরেন্ট ২৩টি। এছাড়া হলের সামনে ও পেছনে স্টল রয়েছে ৬০টি। এবারের মেলায় শিশুদের জন্য প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রকমের রাইটস রয়েছে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো জানায়, নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। এবার বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে গেট ইজারা প্রতিষ্ঠান আব্দুল্যাহ এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে ২ শতাধিক সেচ্ছাসেবক থাকবেন।

দর্শনার্থীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র এবং ব্যাংকিং সেবা দিতে মেলায় থাকছে জনতা, ট্রাস্ট ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পাশাপাশি একাধিক ব্যাংক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র।

মেলায় বিআরটিসির দোতলা গাড়ি রাখার জায়গা ছাড়াও হলের বাইরে প্রায় এক হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত প্রতিদিন ৭০টি বিআরটিসি শাটল বাস এবং শুক্র ও শনিবার বিআরটিসির বাস ছাড়াও কয়েকটি পরিবহণের ১২০টি যাত্রীবাহী বাসও চলবে।

প্রতিদিন মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

এবছর মেলায় প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৪০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনেও মেলার টিকিট পাওয়া যাবে। বিকাশের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ছাড়ে টিকিট কেনা যাবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীরা তাদের কার্ড দেখিয়ে ফ্রিতে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত