বিএনপিকে মোকাবিলা করা কঠিন কাজ নয়

বললেন তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিকে মোকাবিলা করা আমাদের জন্য কোনো কঠিন কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ সেটা হচ্ছে বিএনপির সাংঘর্ষিক রাজনীতি। তবে তারা কী করতে চায় বা কী করতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। সেটিকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা দুটিই আছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিনেমা হল মালিক সমিতি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনি বছরে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন যাবে, চ্যালেঞ্জগুলো কী ও তা কীভাবে মোকাবিলা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ সেটা হচ্ছে বিএনপির সাংঘর্ষিক রাজনীতি। বিএনপির মিত্রদের দেশবিরোধী অপতৎপরতা, বিদেশিদের পদলেহন এবং বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়া- এগুলো করে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। কিন্তু সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গিয়ে এখন বিএনপি নিজেই বেকায়দায় পড়েছে। কারণ ১০ ডিসেম্বর তারা ভেবেছিল নয়াপল্টনের সামনে একটি সমাবেশ করতে পারবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারবে। কিন্তু সেটি তারা করতে পারেনি। ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপি বুঝতে পেরেছে তাদের শক্তি ও সামর্থ্য কতটুকু।

তিনি বলেন, এরপরও বিএনপি এ বছর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তবে আমরা তাদের সর্বোচ্চ অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা ২০১৩-১৪-১৫ সালে দেখেছি। আমরা সেগুলো সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সবচেয়ে বড় যে বিষয় সেটা হলো সারা বিশ্বে সংকটময় পরিস্থিতি চলছে। করোনা মহামারি চলে গিয়েছিল, দুই মাস আগেও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল করোনা যায়নি। চীনসহ কয়েকটি দেশে করোনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পাশাপাশি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ভালো রাখা এবং সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। গত তিন বছরও চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটা আমরা মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ বছরও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব। তিনি বলেন, মানুষ কিন্তু ভুলে যায় আগে কেমন ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বিদ্যুতের আওতায় ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ। এখন বিদ্যুৎসুবিধা পায় শতভাগ। কিছুদিন আগে যখন লোডশেডিং হলো তখন মানুষ হৈ হৈ রৈ রৈ শুরু করেছিল। কিন্তু এখন আর লোডশেডিং নেই। সে খবর পত্রিকার পাতা বা টিভির খবরে নেই। তো মানুষ অতীত ভুলে যায়। আগে যে রাস্তাঘাট ছিল না, যে রাস্তায় রিকশা নিয়ে চলা দুষ্কর ছিল, এখন সেখানে গাড়ি চলে। এ বিষয়গুলো মানুষ ভুলে গেছে। ১৪ বছর আগে কি ছিল? আমরা ক্ষমতায় আসার আগে তো সব বদলে দিতে পারিনি। আর আজকে কী পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছি সে অবস্থা মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষত্রে আমি গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে বলে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নেতারা এসব কথা প্রতিদিন বলেন। বর্তমান অবস্থা হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে জনগণ তো দূরের কথা তাদের নেতাকর্মীরাও নেই। তিনি বলেন, কর্মীরা এখন নেতাদের কাছে প্রশ্ন করে সরকার বলেছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে, সেখানে আপনারা করলেন না কেন? না করে লাভ কী হলো? এটাই হচ্ছে বিএনপির নেতাদের প্রতি কর্মীদের প্রশ্ন। এখন জনগণ তো দূরের কথা তাদের কর্মীরাও তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তাদের এই নেতৃত্ব কতটুকু করতে পারবে সেটা তারা ভালো জানে। মন্ত্রী বলেন, গত ডিসেম্বরে বিএনপি দুটি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি হচ্ছে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার গো ধরা। সেটা করে তাদের রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। অপরটি হচ্ছে তাদের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা। এতেও তাদের ক্ষতি হয়েছে। এই প্রশ্নই বিএনপির ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা সে সিদ্ধান্তের জবাব দিতে পারেন না তো, এ জন্যই উচ্চবাচ্য করে কর্মীদের আস্বস্ত করতে চান। এদিকে গতকাল বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় স?ম্মেল?নে দেয়া বক্ত?ব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারে থাক?লে সমা?লোচনা হ?বে। সরকা?রে থাক?লে সহ্য করার ক্ষমতাও থাক?তে হয়, চামড়া মোটা হ?তে হয়। আর সেটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আছে। মূলত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্মেলন থেকে বক্তারা সরকারের সমালোচনা করছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে হাছান মাহমুদ বলেন, বি?ভিন্ন রাজ?নৈ?তিক দ?লের এবং আপনা?দের দ?লের কেউ কেউ সরকা?রের সমা?লোচনা কর?ছি?লেন। দায়িত্বে থাকলে তো ভুল হবে। সরকা?রে থাক?লে সমা?লোচনা হ?বে। যে গা?ছে ফল ধ?রে সে গা?ছে ঢিল মা?রে, অন্য গা?ছে মা?রে না। তিনি বলেন, দুনিয়ার কোনো সরকার ৫০০ বছর আগে থেকে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারেনি। আগামী শত বছরেও কোনো সরকার নির্ভুল কাজ করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। বক্তব্যে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসার পরামর্শ দেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, কাজ যেগুলো হচ্ছে, সেটির প্রশংসা থাকতে হয়। ভালো কাজের প্রশংসা না থাকলে কাজের উৎসাহ কমে যায়। ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে, খারাপ কাজের সমালোচনাও করতে হবে। আমরা মনে করি, ভুল শুধরে নেয়ার সুযোগ থাকে। তিনি বলেন, এই দেশ আমাদের সবার। সবাই রক্ত দিয়ে এ দেশ রচনা করে গেছেন। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য দেশের কল্যাণ করা এবং এজন্য সাংঘর্ষিক রাজনীতির অবসান করা দরকার। একইসঙ্গে সবকিছুতে না বলার রাজনীতিও বন্ধ হওয়া দরকার। সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুকে উদ্দেশ করে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন করার কথা বলা হলেও তারা তা করেননি। আজ চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বলতে পারত, তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সম্মেলন করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ তারা মনে করেছেন ওখানে করতে গেলে মুসল্লিদের নামাজের সমস্যা হবে। অতীতে বিভিন্ন সরকার কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির বিষয়ে ‘মুলা ঝুলানো’ নীতিতে ছিল বলে অভিযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী। হাছান মাহমুদ বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি বিষয়টি বহু বছরের পুরোনো দাবি। সেই দাবি পূরণ করা হবে বলে মুলা ঝুলিয়ে রাখা হতো। খালেদা জিয়া ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, এরশাদ সাহেব ঝুলিয়ে রেখেছিলেন কিংবা জিয়াউর রহমান ঝুলিয়ে রেখেছিলেন সেটা বলব না। তবে এটা জুলিয়ে রাখা হতো বা করা হতো। প্রধানমন্ত্রী মুলা ঝুলিয়ে না রেখে কার্যে পরিণত করেছেন।