ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব ও ১৫ দফা দাবি

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব ও ১৫ দফা দাবি

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দেয়া ও নিবন্ধিত সব দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এছাড়া সংবিধান সংশোধন, ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রশাসনকে খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে গড়ে তোলা, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনি ব্যবস্থা ও নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার চালুসহ রাষ্ট্র সংস্কারের ১৯ দফা প্রস্তাব করেছে দলটি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনে এসব দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর আগে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের দাবি ও প্রস্তাবের বেশ কিছু বিষয়ে মিল আছে বলে জানা গেছে।

দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমকে আমির ও মাওলানা ইউনুছ আহমাদকে মহাসচিব পদে পুনর্বহাল রেখে ইসলামী আন্দোলনের নতুন কমিটির ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৭৩ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ, ২২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়।

১৫ দফা দাবি: সম্মেলন থেকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দেয়া ও নিবন্ধিত সব দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনসহ ১৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন দলের আমির। দাবির মধ্যে রয়েছে- যে কোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা; দেশে মদ ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করা; শিক্ষার সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা; কারান্তরিণ সব আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়া; জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করা; নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা; দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা; নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা; জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা; সব রাজনৈতিক দলের জন্য সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সব কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করা; বেকারত্ব দূরিকরণে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংষ্কার করা এবং আশু সমাধান হিসেবে বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা; নাগরিকদের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নেয়া।

১৯ দফা প্রস্তাব: জাতীয় সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব করা হয়। সেগুলো হচ্ছে- এ ভূখণ্ডের মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বোধ, বিশ্বাস ও মনস্তত্ব আমলে নিয়ে এবং গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন; প্রশাসনকে দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে ‘জনতার সেবক দর্শন’ এ খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে গড়ে তোলা; বিদ্যমান ক্ষমতার চর্চা ও ধারণাকে ভাঙতে ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’ নীতির প্রয়োগ করে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও ন্যায়পাল বিভাগকে পরস্পর থেকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা’ অর্থ খাত, অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে, খাতগুলোকে শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করতে এবং স্বনির্ভর এনার্জি সেক্টর নির্মাণে জাতীয় কাউন্সিল গঠন করা; উৎপাদক কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনা তথা পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণসহ পুরো ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করা; আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা; দেশের শিল্প খাত ও মজুরি খাতকে বিশ্লেষণ করে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে সর্বাধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা এবং নৈতিকতা ও সততা নিশ্চিতকরণে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা; সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অধীনে আনা; ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য উদ্ভুত নীতির অধীনে নারীর অবস্থান ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করা; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কার্যকর সংসদ, ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এধরনের সব উদ্যোগে সমর্থন করে; আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনি ব্যবস্থা; নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার; সব দলের সমন্বয়ে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন; বেকারভাতা প্রদান, বিমামূল্যে জব রিলেটেড ট্রেইনিংয়ের আয়োজন করা; বাংলাদেশে সব নাগরিকের অধিকার সমানভাবে সংরক্ষণ করা; সব বৈষম্য অবসান, জাকাত বাধ্যতামূলকভাবে আদায়, দুর্নীতি বন্ধ এবং প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনসহ রাষ্ট্রের যে কোনো দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ঘোষণা করা; মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করা; বিচার বিভাগের সামগ্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা এবং প্রবাসীদের মর্যাদা ও স্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশের সম্পদ বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ সৈয়দ ইবরাহীম বীরপ্রতীক, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, জাতীয় দীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। সম্মেলনে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত