সাভার মিলিটারি ফার্ম পরিদর্শনে সেনাপ্রধান
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আএসপিআর
শীতকালীন প্রশিক্ষণ এলাকা সাভার মিলিটারি ফার্মে ফিল্ড হেডকোয়ার্টার গতকাল মঙ্গলবার পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সারা দেশে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়েছে সেনাসদরসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব ফরমেশনগুলো। গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ হতে তিন সপ্তাহের জন্য নতুন উদ্যমে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। জাতির গর্ব এবং আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য হলো- যুদ্ধ পারঙ্গমাতা, যুদ্ধোপযোগিতা ও রণপ্রস্তুতি প্রদর্শন। দেশসেবায় নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে সরেজমিন বাস্তবধর্মী বিভিন্ন সামরিক বিষয়াদি অনুশীলনের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই এই অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। এ সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ, এডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট মেজর জেনারেল একেএম রেজাউল মজিদসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডিফেন্স জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাপ্রধান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের রয়েছে যুদ্ধ জয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, যার মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক। প্রতি বছরের ন্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ হতে শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সেনাবাহিনী পর্যায়ে শীতকালীন প্রশিক্ষণের পর গত বছর সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মতো লজিস্টিকস এফটিএক্স এবং ১০ বছর পর এ বছর এত বৃহৎ পরিসরে প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর সক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্য রণপ্রস্তুতির বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। জাতির গর্ব এবং আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এবারের শীতকালীন প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য হলো ‘যুদ্ধ পারঙ্গমতা, যুদ্ধোপযোগিতা ও রণপ্রস্তুতি’। দেশকে বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে বাস্তবধর্মী বিভিন্ন সামরিক বিষয়াদি অনুশীলনের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই এই অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সেনাবাহিনী প্রধানের বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের উন্নত যুদ্ধাস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন, নতুন কৌশলের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধা সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এই অনুশীলনের পরিকল্পনা করা হয়।
এ বছর শীতকালীন বহিরাঙ্গন অনুশীলনটিতে অধিকতর বাস্তবধর্মী ও অভিনব জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। আজ প্রশিক্ষণের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, আমাদের এই শীতকালীন প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে। আমরা এখন বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রশিক্ষিত, অধিক প্রত্যয়ী এবং বহিঃশত্রুর যে কোনো আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ‘জনগণের সেনাবাহিনী’। এই দর্শনকে সমুন্নত রেখে সেনাবাহিনী প্রধানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শীতকালীন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অঞ্চলগুলো নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং শীতার্ত মানুষদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা, পরামর্শ প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। এবারের অনুশীলনে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনা সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জিওসি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফরমেশনে অনুশীলন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে একটি বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে সেনাবাহিনী প্রধান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনের পূর্বে ৬ স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড এবং ৮৬ স্বতন্ত্র সিগন্যাল ব্রিগেডের শীতকালীন প্রশিক্ষণ এলাকা আশুলিয়ার দত্তপাড়া পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালীন সময় তিনি ৯০০ জন অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এছাড়া বিনামূল্যে স্থানীয় ৪৬৩ জনকে মেডিক্যাল চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। শীতকালীন প্রশিক্ষণ শেষে আগামী ৬ জানুয়ারি সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন করবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।