ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১২ গুণী ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান

‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১২ গুণী ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান

শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতা এবং একটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৩ জন গুণী ব্যক্তি পেলেন ‘হুজ হু’ বাংলাদেশ, ২০২২ অ্যাওয়ার্ড।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এ পদক দেয়া হয়। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন শিক্ষায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে রুনা লায়লা, সাংবাদিকতায় ইহসানুল করিম, শিল্প ও সাহিত্যে ড. অগাস্টিন ক্রুজ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজসেবক কাজী রফিকুল আলম, ক্রীড়ায় সাবরিনা সুলতানা, কৃষিতে লায়ন কহিনুর কামাল, শিল্প-বাণিজ্যে এসএস গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মু. আবু সাদেক, উদ্যোক্তায় স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার সুলাইমান এস আযানী, নারী উদ্যোক্তায় নাসিমা আক্তার নিশা, পেশাজীবী বিভাগে প্রফেসর ড. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, আজীবন সম্মাননায় শিল্পি রফিকুন নবী এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা দেয়া হয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড টান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। অনুষ্ঠানে হুজ হুর প্রধান উপদেষ্টা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, যাদের সম্মাননা দেওা হয়েছে, তারা সবাই গুণী। এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, প্রধান নির্বাহী নাজিনুর রহিমসহ হুজ হুর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। হুজ হু ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বের অনুসরণীয় গুণীজনদের পদক প্রদান ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে আসছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩৩ হাজার গুণীজনের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করেছে হুজ হু। ২০১৬ সালে প্রথম হুজ হু বাংলাদেশে গুণীদের সম্মাননা কাজটি শুরু করে। ২০১৬ সালে প্রথম হুজ হু বাংলাদেশে প্রথম সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০১৬ সালে পদক প্রাপ্তরা হলেন কৃষিতে শাইখ সিরাজ, শিল্প ও সংস্কৃতিতে সানজিদা খাতুন, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, সাংবাদিকতায় তোয়াব খান, শিল্প ও সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ক্রীড়া ক্ষেত্রে আকরাম খান, শিল্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে রহিম আফরোজ গ্রুপের পরিচালক নিয়াজ রহিম, উদ্যোক্তা হিসেবে এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস-উদ্দৌলা, ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, এনাম আলী এবং লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান আব্দুল গাফফার চৌধুরী। ২০১৮ সালে হুজ হু বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মতো সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০১৮ সালে পদক প্রাপ্তরা হলেন কৃষিতে ড. এমএ রহিম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে আলী জাকের, শিক্ষা ক্ষেত্রে ড. রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিকতায় গোলাম সারওয়ার, শিল্প ও সাহিত্যে সেলিনা হোসেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভেলেরি এন টেলর, ক্রীড়া ক্ষেত্রে কাজী মো. সালাউদ্দিন, উদ্যোক্তা হিসেবে ব্রিটানিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জেপি, ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০২০ সালে পদক প্রাপ্তরা হলেন শিক্ষায় জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, শিল্প ও সংস্কৃতিতে মুস্তাফা মনোয়ার, সাংবাদিকতায় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, শিল্প ও সাহিত্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজসেবক খন্দকার মহিউদ্দীন, ক্রীড়ায় জোবেরা রহমান লিনু, কৃষিতে পূর্বাঞ্চলের কৃষক জাগরণের নায়ক মো. আব্দুল বাসির বদু মিয়া, শিল্প-বাণিজ্যে আবদুল হালিম পাটোয়ারী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল হালিম পাটোয়ারী, উদ্যোক্তায় অরর্চাড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক, নারী উদ্যোক্তায় বিবি রাসেল, আজীবন সম্মাননায় কণ্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু। প্রতি ২ বছর অন্তর ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ পদক দেয়া হচ্ছে।

লায়ন কোহিনুর কামাল : ১৯৬৩ সালের ২২ এপ্রিল নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সফলতার সাথে যৌথ পরিবারের দায়িত্ব সম্পন্ন করে স্বামী লায়ন সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় সহযাত্রী হন। বর্তমানে তিনি মেরিডিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান। মেরিডিয়ান গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেরিডিয়ান ফুডস, মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো, মেরিডিয়ান হোটেল, মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটি ও মেরিডিয়ান হ্যাচারি অ্যান্ড ফার্মস। বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি কাজের দূরবস্থার কথা বিবেচনা করে কৃষি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন এবং কৃষক ও কৃষি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশের সাথে কাজ করে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। বান্দরবানের লামা উপজেলার কেয়াজু পাড়ায় প্রায় ৬০০ একর ভূমিতে রাবার, আম, ড্রাগন ফলসহ অন্যান্য ফলজ ও বনজ বাগান এবং চট্টগ্রামের মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্টে প্রায় ৯০ একর ভূমিতে মৎস্য চাষ ও গুণগত মানের পোনা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চইষদের সরবরাহ এবং দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

কৃষিক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৯ (২০১৪), জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ২০১১, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১১, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড- ২০২০, অনন্যা পুরস্কার (২০০৭) ইত্যাদি। লায়ন কোহিনুর কামাল লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর ২০২২-২৩ সেবা বর্ষের দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি অটিসটিক চিলড্রেনস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার ওয়ার্ক ফর থার্ড জেন্ডার, উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত।

রুনা লায়লা : বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের একজন খ্যাতনামা এবং স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। এক দিনে সর্বাধিকসংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য তিনি গিনেস বুক অব রেকর্ডসে স্থান পেয়েছেন। বাংলা ছাড়াও তিনি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, পশতু, বেলুচি, আরবি, ফার্সি, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। একজন প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে তিনি উপমহাদেশের তিনটি দেশের চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সংগীতে তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩০০টির ও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি রেকর্ডসংখ্যক পাঁচবার বাংলাদেশে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এছাড়া ভারতে সায়গল পুরস্কার, নিগার পুরস্কার (দুইবার), সমালোচক পুরস্কার, কালাকার পুরস্কার, স্নাতক পুরস্কার (দুইবার) পাশাপাশি পাকিস্তানের সেরা গায়ক হিসেবে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিক থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুনা লায়লাকে মহা সঙ্গীত সম্মান পুরস্কারে ভূষিত করেন। তিনি UNAIDS Gi Young People with HIV AIDS এর অফিসিয়াল Spokperson. এছাড়া তিনি SAARC Gi HIV/AIDS & Tubarculosis এর শুভেচ্ছাদূত হওয়ার সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

ড. অগাস্টিন ক্রুজ : ড. অগাস্টিন ক্রুজ ১৯৪২ সালে মাউছাইদ, উত্তরখান, ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউএসএ থেকে পিএইচডি, দর্শন, মেজর ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন ডিগ্রি অর্জন করেন। সাহিত্য, দর্শন, পুরাকীর্তি, ইতিহাস, সৃষ্টি, পুষ্টিবিজ্ঞান, মানবস্বভাব, অদ্ভুত রহস্যময় ও অনিশ্চিত কার্যকরণ স্বভাববিষয়ক গবেষণায় আত্মনিয়োগী একজন দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক কবি। তিনি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান চর্চায় বিশেষভাবে আগ্রহী ।

ড. অগাস্টিন ক্রুজ ১৯৭৯ সাল থেকে সেন্ট জুডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবাণিজ্যিক মানসিকতায় মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে। সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তার মধ্যে বাংলাদেশি আমেরিকান সেন্টার অব নর্থ আমেরিকা পুরস্কার, দি খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন সম্মাননা, মাসিক এডুকেশন ওয়াচ’র আজীবন শিক্ষা উদ্যোক্তা সম্মাননা এবং বাংলাদেশ ভারত নজরুল সম্মেলন সম্মাননা উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কাব্যচর্চায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই পর্যন্ত তার ৩০টির ও অধিক কাব্যগ্রন্থ’ প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে আমার জন্ম হয়েছে বলেই, বিধাতার ইচ্ছে, মহা পরাজয়, Speechless, Let Me Be Alone, If I Were Not Born , Silent Music, Roaming Soul ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক। ১৮ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মাতা রাবেয়া খাতুন। তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন সিলেটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটসের কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পি.এইচডি করেন। পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন। সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার মধ্যে প্রেম ও প্রার্থনার গল্প, তিন পর্বের জীবন, আধখানা মানুষ, অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প, নন্দনতত্ত্ব, অলস দিনের হাওয়া, দিনরাত্রিগুলো, রবীন্দ্রনাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্প প্রসঙ্গ উল্ল্যেখযোগ্য। এছাড়া মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রহমানের ওপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয় এছাড়া একুশে পদক ২০১৮, প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার ২০০৫, কাগজ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬ উল্লেখযোগ্য।

সুলাইমান এস. আজানী : বাংলাদেশের উৎপাদন ও বিপণন খাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানিতে ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে কোম্পানি পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানি ১৯৫০-এর দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশে কীটনাশক এবং জীবাণুনাশক পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানির বর্তমানে ৪৮টির অধিক পণ্য রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েলের পণ্যগুলো বর্তমানে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে ১৫টির ও অধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তার নিজস্ব ব্র্যান্ড, আজানী এন্টারপ্রাইজেস ইনকর্পোরেটেড প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ফটো ফিনিশের ম্যানেজিং পার্টনারও ছিলেন। আজানী সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আগা খান ফাউন্ডেশন, তিনি আগা খান ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আজ-অবধি কর্মরত আছেন। তিনি আগা খান কাউন্সিল ফর বাংলাদেশের’র প্রেসিডেন্ট এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ’র (আইপিডিসি) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আজানী ১৯৬৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যবসা উন্নয়ন এ অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ একজন প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট কলামিস্ট এবং তিনি দেশের অন্ধত্ব নিবারণে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। এছাড়া সুদীর্ঘ ৪০ বংসর চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দিয়ে মেডিক্যাল শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। ১৯৫৬ সালের গোপালগঞ্জের এক সম্ভ্রন্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আলহাজ শামসুদ্দিন আহমেদ, মাতা মরহুম মিসেস আলহাজ হোসনে আরা বেগম। তার বাবা সহ তিনি ও তার অন্য ভাইরা মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি ১৯৮২ সালে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ডিপ্লোমা ইন অফথালমোলজি এবং ইউকে (গ্লাসগো) থেকে তিনি কলেজ অব ফিজিসিয়ান অ্যান্ড সার্জনসের অধিনে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মেম্বার, বিএসএমএমইউর সিন্ডিকেট মেম্বার। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রায় ১০০ টির মতো বিএমডিসি স্বীকৃত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা রয়েছে। তার লেখা বাংলায় চক্ষুবিষয়কটি ও ইংরেজিতে দুটি বই রয়েছে। তিনি গ্রামেগঞ্জে কমিউনিটি চক্ষু শিবিরে প্রায় ১ লাখ চোখের অপারেশন করেছেন।

তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি ২০১২ সালে ২৭তম APAO কংগ্রেস, কোরিয়া থেকে ডিস্টিংগুইসড (Distinguished) সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন এছাড়া ২০১৬ সালে এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজি থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্মাননা, ২০১৮ সালে নেপালে কমিউনিটি চক্ষুবিদ্যায় অসাধারণ কাজের জন্য এসএও পুরস্কার, ২০১৯ সালে কলকাতায় সিসিসি স্বর্ণ পুরস্কার এবং এআইওসি অ্যাওয়ার্ড গুরুগ্রাম ২০২০ সম্মাননা অর্জন করেন।

মু. আবু ছাদেক : মু. আবু ছাদেক ১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির মাধ্যমে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে তিনি এসএস এন্টারপ্রাইজ নামে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। বর্তমানে তিনি এসএস গ্রুপ ও ফার্স্ট এসএস এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি নওশিন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং পার্টনার, আনিকা ট্রেডিং করপোরেশনের প্রোপ্রাইটর, রিয়েল অ্যাসেটস (প্রা.) লিমিটেডের ডিরেক্টর, ঝিলমিল হসপিটালস (প্রা.) লিমিটেডের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মু. আবু ছাদেক ব্যবসা ও সমাজসেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ২০১৭ সালে জর্জ হ্যারিসন অ্যাওয়ার্ড, কবি নজরুল স্বর্ণপদক, মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা অ্যাওয়াড, শেরেবাংলা পদক এবং ২০১৯ সালে অমর প্রকাশনী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এসএস গ্রুপ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ করার মাধ্যমে দেশ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তন্মধ্যে কনস্ট্রাকশন, নদী খনন ও নদীরক্ষা, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমদানি-রপ্তানি, ট্রেডিং, ইলেক্ট্রো-মেডিক্যাল সরবরাহ ব্যবসা অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ অসংখ্য ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

ইহসানুল করিম : ইহসানুল করিম ১৯৫১ সালের ৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তি বাহিনীর হয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ নেন। সাংবাদিক ইহসানুল করিম ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের নয়াদিল্লিতে সংস্থাটির ব্যুরো প্রধান ছিলেন। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাসসের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি, পিটিআই এবং ভারতের দ্য স্ট্যাটমেন্ট ও ইন্ডিয়া টুডেসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশি প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাসস থেকে অবসর গ্রহণের পর একই বছরের ২০ মে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পেশাদার সাংবাদিক ইহসানুল করিম ২০১৫ সালের ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে যোগদান করেন এবং সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জাতির পিতার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’র (বিএলএফ) সদস্য হিসেবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। ইহসানুল করিমের সহধর্মিণীর নাম মমতাজ শিরিন করিম। তাদের এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান রয়েছে।

কাজী রফিকুল আলম : ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম যুক্তরাজ্য থেকে শিক্ষায় বিশেষত্বসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করেন। তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিচালক, (পরিকল্পনা) পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে কোনো বেতন বা ভাতা ছাড়াই দুস্থ মানবতার সেবায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনে পূর্ণকালীন হিসেবে যোগদান করেন। তার গতিশীল নেতৃতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী এনজিও-ইউনেস্কো লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়। তিনি বর্তমানে Campaign for Popular Education-এর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ রিডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। কাজী রফিকুল আলম টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এডুকেশন ফর অল, ইউনেস্কো, প্যারিসের সদস্য ছিলেন। তিনি ইউনেস্কো রিসোর্স পার্সন হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক কালচারাল সেন্টার ফর ইউনেস্কো-জাপান এবং আইসেসকোসহ সবার জন্য শিক্ষা প্রচারে বিশ্বব্যাপী ৮০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। তিনি আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আউস্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। এর বাইরে বেশ কয়েকটি মূলধারার স্কুল, কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর উত্তরায় বেসরকারি খাতে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট্য আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দরিদ্র রোগীরা তুলনামূলক স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। তার উদ্ভাবিত মাল্টি-গ্রেড টিচিং-লার্নিং, প্রারম্ভিক শৈশব উন্নয়ন, ইউনেস্কোর কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার, যা সারা দেশে গণকেন্দ্র নামে পরিচিত, সারা দেশে ২০০টি কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার প্রান্তিকপর্যায়ে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। গত সাড়ে তিন দশকে জনাব কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ২ কোটিরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ মানুষের সেবা করা হয়। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন সেবা পেয়েছেন। কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইউনেস্কো কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার, আইসেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার, এজিফান্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ডসহ ২০টির অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়েও জনাব কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ ১৬টি পুরস্কার লাভ করেন।

সাবরিনা সুলতানা : সাবরিনা সুলতানা স্পোর্টস শুটার। তিনি ১৯৭৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছেলেবেলা কেটেছে চট্টগ্রাম শহরে। তার বাবা ডা. মো. মোসলেহ উদ্দীন ছিলেন চট্টগ্রাম সি,আর,বি রেলওয়ে হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক। ১৯৮৫ সালে রাজশাহীর আন্তঃক্লাব শুটিংয়ের মধ্যদিয়ে তার প্রথম শুটিংয়ে অভিষেক হয়। পরপর তিনবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ১৯৯২ সালে ৫ম বাংলাদেশ গেমসের মধ্যদিয়ে তার জাতীয় পর্যায়ে শুটিং এ পদার্পণ। তিনি ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ সাফ গেমসে তিনটি ব্রোঞ্জ ও ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ বাংলাদেশ গেমসে তিনটি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালটি ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়, সেই বছর দ্বিতীয় সাফ শুটিং প্রতিযোগিতায় চারটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য এবং ওই বছরই দ্বিতীয় কমনওয়েলথ শুটিং গেমসে একটি স্বর্ণপদক লাভের মধ্যদিয়ে বছরের সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন। সাবরিনা সুলতানা জাতীয়ভাবে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৩টি স্বর্ণ, সাতটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। এবং আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাফ গেমস, সাফ শুটিং ও কমনওয়েলথ শুটিং এ দলীয়ভাবে পাঁচটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য ও এককভাবে পাঁচটি স্বর্ণ, চারটি রৌপ্য ও তিনটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। তার শুটিং ক্যরিয়ারে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন সেগুলো হলো ১৯৯৩ সালে অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৬ সালে স্পোর্টস জার্নাল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (Best Shooter), ১৯৯৭ সালে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, স্পোর্টস জার্নাল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (Best player), এবং যুব ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৮ সালে স্পোর্টস জার্নাল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (Best Shooter), ১৯৯৯ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গবেষণা পরিষদ গোল্ড মেডেল এবং ২০০৬ সালে ঢাকা মার্কেনটাইল ব্যাংক লিমিটেড সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।

নাসিমা আক্তার নিশা : নাসিমা আক্তার নিশা, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম’র (উই) স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি উই’র প্রেসিডেন্ট। এছাড়া ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক তরুণের স্বপ্ন তৈরি করেছেন তিনি, বানিয়েছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। একজন প্রযুক্তি-উৎসাহী এবং ব্যবসায়িক দক্ষতার অধিকারী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। সমাজে নারীর অবদানের গভীর উপলব্ধি নিয়ে তিনি সর্বদা নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। নাসিমা আক্তার নিশা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। মাস্টার্স শেষ করার পর তিনি রেভারি করপোরেশন শুরু করেন, যা ২০১১ সালে ল্যাব মিমোসা নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য তিনি উদ্যোক্তা মাস্টারক্লাস সিরিজ নামে এক বছরব্যাপী অনলাইন কোর্সের আয়োজন করেন।

এছাড়া নারীদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বিকাশের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে গত ১ বছরে ২০ হাজারেরও বেশি নারীকে দক্ষ করে তুলেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে অনন্যা কর্তৃক ২০১৯ সালে অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড, ২০২০ সালে ই-কমার্স মুভারস অ্যাওয়ার্ড, ২০২১ সালে উইমেনস অব ইনিসপিরেশন জেসিআই অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর অ্যাওয়ার্ড, সাউথ এশিয়া বিজনেস পার্টনারশিপ অ্যাওয়ার্ড ও বাংলাদেশ WICCI অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২ সালে জুমবাংলা যুগপূর্তি সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।

রফিকুন নবী : রফিকুন নবী, যিনি রনবী নামেই সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট। ১৯৪৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রশীদুন নবী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন জমিদার পরিবারের সন্তান। টোকাই নামক কার্টুন চরিত্রটি তার অনবদ্য সৃষ্টি। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টোকাই কার্টুন স্ট্রিপ হিসেবে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। ১৯৭৩ সালে গ্রিসের এথেন্স স্কুল অব ফাইন আর্ট-এ প্রিন্ট মেকিংয়ের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ঢাকা আর্ট কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টসের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৯-১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথম ডিন ছিলেন। তিনি বর্তমানে ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। তার শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি চারুকলায় শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় সম্মাননা পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, বুক-কভার ডিজাইনের জন্য ১৩ বার ন্যাশনাল বুক সেন্টার পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ২০০৮ সালে তার আঁকা খরা শীর্ষক ছবির জন্য ৮০টি দেশের ৩০০ জন চিত্রশিল্পীর মধ্যে ‘এক্সিলেন্ট আর্টিস্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে মনোনীত হন’ তিনি ২০১৫ সালের জন্য শেলটেক কর্তৃক প্রদত্ত ‘শেলটেক পদক’ লাভ করেন। তিনি একজন বাংলাা একাডেমির সম্মানিত ফেলো। ২০১৬ এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এশিয়ান দিবার্ষিক প্রদর্শনীর জুরি সদস্য এবং জুরিবোর্ডের সভাপতি ছিলেন। এই পর্যন্ত তার ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে দেশসেরা বিশ্বসেরা শিল্পিকথা, রনবীর বিশ্ব দর্শন, রনবীর রম্য ভাবনা, স্মৃতির পথরেখা উল্লেখযোগ্য। তিনি দেশে ও বিদেশে ১৩টি একক চিত্র প্রদর্শনী এবং অসংখ্য দলগত প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যন্ড টান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) : সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানে বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ। আস্থার শেষ ঠিকানা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন- ‘জঙ্গিবাদেও বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড টান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। প্রতিষ্ঠার পরই সন্ত্রাস দমনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে সিটিটিসি। গুলশানের হোলিআর্টিজান হামলাসহ সব জঙ্গি হামলার নেপথ্যের কুশীলবদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। দেশব্যাপী জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সিটিটিসি কর্তৃক ২৩টি হাই-রিস্ক অপারেশনে ৬৩ জন। সন্ত্রাসীকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। ২৪১টি মামলায় ৫৩১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফল স্বরুপ গ্লোবাল টেটোরিজম ইনডেক্সে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। সিটিটিসি শুধু অভিযান পরিচালনা করে থেমে থাকেনি, গবেষণার মাধ্যমে উগ্রবাদের কারণ অনুসন্ধান করে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে উগ্রবাদ প্রতিরোধে সচেতনা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করে চলেছে। উগ্রবাদ দমনের পাশাপাশি সাইবার ও ট্র্যান্সনাশনাল অপরাধ দমনে সফলভাবে কাজ করছে অত্র ইউনিট। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সিটিটিসি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনে সময়ের প্রয়োজনে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি’র সাইবার প্রযুক্তিতে দক্ষ, আধুনিক ও স্মার্ট এই ইউনিট। কাউন্টার টেরোরিজ অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জঙ্গিবাদ ও সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত