গত সোমবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জাতিসত্তার মানুষদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ এবং শঙ্কা প্রকাশ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিশন একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হামলার শিকার রেংয়েন ম্রোপাড়ার পাড়াবাসীর অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানি তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, গত ২৬ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ম্রো জাতিসত্তার মানুষদের এলাকার ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেয়া, পানির ঝরনা বিনষ্ট করা এবং পরবর্তীতে এর ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের অত্যধিক কষ্টে জীবনযাপনের বিষয়ে কমিশন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় যে, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন থেকে উক্ত এলাকার ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। উক্ত ঘটনায় কমিশন থেকে নিম্নলিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়: ক) স্থানীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে মর্মে অবহিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহনির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। খ) স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনোভাবেই কোনো হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গ) এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগীরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপার, বান্দরবানকে বলা হয়। ঘ) উক্ত ঘটনার বিষয়ে সার্বিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অবস্থা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক, বান্দরবানকে বলা হয়। ঙ) বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।’ জেলা প্রশাসক, বান্দরবান থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে অধিকতর তথ্যের প্রয়োজন থাকায় আগামী ৩১/০১/২০২৩ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করার জন্য জেলা প্রশাসক, বান্দরবানকে এরই মধ্যে বলা হয়। কমিশন থেকে বিভিন্ন দপ্তরে উল্লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলেও গত ২ জানুয়ারি শেষ রাত্রে পুনরায় এ ধরনের হামলা হয়েছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশন মনে করে, এসব অভিযোগের বিপরীতে কার্যকর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে এবং ম্রো সম্প্রদায়ের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষিতে কমিশন ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করার জন্য কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সম্মানিত সদস্য জনাব কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) ও জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলমসহ চার সদস্যের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনোভাবেই হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।