স্মার্ট প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাহাত হুসাইন
প্রকৌশলী আবদুস সবুর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। পরপর তৃতীয় মেয়াদে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। গেল বছরের ২৪ ডিসেম্বর দলটির ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি।
ছাত্রলীগের হাত ধরেই রাজনীতিতে পথ চলা শুরু প্রকৌশলী আবদুস সবুরের। ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। ১৯৮৭ সালে তিনি বুয়েটে ছাত্রদলের পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রিডম পার্টি গঠনে বাধা প্রদান করেন এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হন। এই সংঘর্ষের জেরে অন্যায়ভাবে বুয়েট থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। উদ্যোক্তা ও মেধাবী তরুণদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা ও দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রকৌশলী আবদুস সবুর। তার সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নানা বিষয় ।
প্রশ্ন : বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বলে মনে করেন?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : আজ থেকে ১৪ বছর আগে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবতা। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই কৃষি, স্বাস্থ্য, ব্যাংক-বিমা, আইসিটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ সকল ইন্ডাস্ট্রিতে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়েও আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল ও গতিশীল ছিল। অনলাইনে অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। অনেকাংশেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণ করা। উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়া। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির সর্বশেষ আপডেট ভার্সন যুক্ত করতে পারলে, আমরা সব ক্ষেত্রে আরও ভ্যালু এড করতে পারব।
প্রশ্ন : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রকৌশলীদের ভূমিকা নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণ করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন। সেক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বশেষ প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হবে। এজন্য প্রকৌশলীদেরও প্রশিক্ষণ আর সেমিনারের মধ্যমে আপডেট থাকতে হবে। তবে আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন, তারা বিশ্বমানের। কেননা তাদের হাত ধরেই পদ্মাসেতু নির্মাণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে যাচ্ছে। আমাদের প্রকৌশলীদের হাত ধরেই আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য হয়েছি। তাদের হাত দিয়েই বঙ্গবন্ধু টার্নেল নির্মাণ ও অত্যাধুনিক মেট্রোরেলের কাজ হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স অর্জনের খাত গার্মেন্টস। সেখানেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছেন। প্রকৌশলীরা দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীতে সর্বশেষ প্রযুক্তি আত্মস্থ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবেন।
প্রশ্ন : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ সবক্ষেত্রে রোবটিক্সের পথে আগাচ্ছে কি না?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : রোবটিক্সের ব্যবহারও ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র একটি অংশ। দেশে রোবটিক্সের ব্যবহারের যাত্রা আরো আগেই শুরু হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে রোবটিক্সের ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে। এছাড়াও দেশে ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ চালু হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের গতি বাড়াতে পর্যায়ক্রমে রোবটিক্সের ব্যবহার বাড়বে। রোবটিক্সের আওতায় কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতির গতি বাড়বে। পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতে কর্মঘণ্টা কমে আসবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রশ্ন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : সামনে আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আমরা দেখেছি, যখনই নির্বাচন আসে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি গোষ্ঠীর মোকাবিলায় জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই প্রথম ডিজিটাল রাষ্ট্র নির্মাণের কথা বলেছেন। এরপর আমরা দেখেছি, ভারত, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ ডিজিটালের ঘোষণা দিয়েছে। তখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে সারা দেশের মানুষ গ্রহণ করেছে। এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’কে মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা অনেকটা স্মার্ট। পরবর্তী প্রজন্ম আরও স্মার্ট হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি গোষ্ঠী যতই ষড়যন্ত্র করুক স্মার্ট প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়েই তা মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন : সামাজিক মাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা কী?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : গুজব-অপপ্রচার দেশের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। গুজবের বিষয়ে দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে আমরা চেষ্টা করছি। তৃণমূল পর্যায়ে, কাজ করছি। তবে পুরোপুরি না হলেও বহুলাংশে জনসাধারণকে আমরা সচেতন করতে পেরেছি। গুজব-অপপ্রচারের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত। দেশে-বিদেশে তারা আওয়ামী লীগ আর সরকারে বিরুদ্ধে গুজব-অপপ্রচার চালায়। অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর যারা বিদেশে বসে গুজব-অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
প্রশ্ন : আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর জন্য আপনার কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
প্রকৌশলী আবদুস সবুর : একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সর্বশেষ আকাঙ্ক্ষা থাকে দলীয় মনোনয়নে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ। সেই ক্ষেত্রে আমিও এর ব্যতিক্রম নই। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবেও এলাকার মানুষের সঙ্গে রয়েছি। ভবিষ্যতেও থাকব। মেঘনা-দাউদকান্দির জনগণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে। আমরা তাদের সামনে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরছি। তাদের জন্যও কাজ করছি। মেঘনা- দাউদকান্দির জনগণ আওয়ামী লীগকে অকুন্ঠ সমর্থন করছে। এলাকাবাসীদের নিয়ে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক স্মার্ট নগরী গড়ে তোলা। তবে এখনই মানুষ প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছে। এছাড়া মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন যাতে বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষ্যে কাজ করব। আমাদের অঞ্চল বন্যা কবলিত। আমি পরিকল্পনা করেছি, স্থায়ী বাঁধ দিয়ে যাতে আমাদের এলাকা বন্যামুক্ত হয় এবং কৃষক যাতে বছরে তিনটি ফসল ফলাতে পারে। এলাকায় বেকার সমস্যা দূর করতে কারিগরি স্কুল, কলেজ ও একটি মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের চিন্তা রয়েছে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, যাতে করে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর কর্মদক্ষতায় ভ্যালু এড হয়। সর্বোপরি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে মেঘনা- দাউদকান্দির অবকাঠামো নির্মাণে উদ্যোগী হব।