ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

নওগাঁয় ভুট্টা চাষে আগ্রহ চাষিদের

নওগাঁয় ভুট্টা চাষে আগ্রহ চাষিদের

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নওগাঁর মাঠে মাঠে এখন সবুজ পাতার সমারোহ। ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা এবং ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। পরিশ্রম ও খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর। এ পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা রোপণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে ৪ হাজার ৫০০ জন কৃষককে ২ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ২০ কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক ভুট্টার চাষাবাদের পরিমাণ সদর উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৫৩৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মান্দায় ৩০০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৪৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ৬৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ২০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৬০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৩৫ হেক্টর, সাপাহারে ৪০ হেক্টর এবং পোরশা ১০ হেক্টর। গত বছর ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর জেলায় চাষিরা উন্নতজাতের তাজমেরি এইচণ্ড৫৫, এনকে-৪০, সানসাইন, সুপারসাইন-২৭৬৯, ২৭৪০ ও ৯৬ এবং মুকুট ভুট্টার আবাদ করেছেন। জেলার নিচু উপজেলা রানীনগর ও আত্রাই। আবাদি জমি নিচু হওয়ায় সেখানে আগেই বন্যায় ডুবে যায় এবং আগেই পানি নেমে যায়। সেসব জমি ফেলে না রেখে কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে ভুট্টার আবাদ করছেন। ভুট্টার আবাদে পরিশ্রম কম ও ফলনও বেশি হয়। বাজারে দাম পাওয়ায় তাদের আগ্রহও বেশি। ভুট্টার পর উঁচু কিছু জমিতে অন্য ফসল ধান ও পাট হয়। তবে বন্যায় ডুবে যাওয়ার ভয়ে কৃষকরা আর আবাদ করেন না। আত্রাই উপজেলার বড় কালিকাপুর গ্রামের কৃষক কৌশিক আহমেদ বলেন, দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। এ এলাকায় বন্যায় ডুবে যায়। আগে পানি এসে আগেই নেমে যায়। এরপর অন্য কোন আবাদ হয় না। ওই জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল ভুট্টা। প্রতি বিঘায় ৪০-৪৫ মণ ফলন পাওয়া যায়। একই গ্রামের কৃষক হারেজ হোসেন বলেন, গত বছর দুই বিঘাতে ৮০ মণ ফলন হয়েছিল। এক হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। এই টাকা দিয়ে ইরি-বোরো কিছু জমিতে আবাদ করা হয়। আবার কিছু জমি বন্ধক নেয়া হয়। এছাড়া সংসারের কাজেও লাগানো হয়। এবার ৩ বিঘাতে লাগানো হয়। কৃষক জবেদ আলী বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা ছিল। এবার ৫ বিঘা জমিতে লাগিয়েছে। গাছ বড় হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে গাছে ফল আসবে। এরই মধ্যে পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে। গাছের পাতা ও কচি মুজি কেটে দিচ্ছে। কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। রানীনগর উপজেলায় মিরাট গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, এক বিঘাতে আবাদ করতে এক মণ ডিএপি, এক মণ ইউরিয়া, কীটনাশক, চাষাবাদ ও পানি সহ প্রায় ১০-১১ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে ২৫-২৬ হাজার টাকা লাভ থাকে। কৃষক শরিফ বলেন, ভুট্টার আবাদে খরচ ও পরিশ্রম কম। আবার ফলনও বেশি। বাজারে ভাল দামও পাওয়া যায়। এবার ১০ কাঠা জমিতে ভুট্টা লাগানো হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে এবং দামও পাওয়া যাবে। রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি ভুট্টার চাষ করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে ভুট্টা আবাদে প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলায় কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। গত বছর কৃষকরা ভালো দাম পেয়েছিল। উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ভুট্টার আবাদ করা হচ্ছে। কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টায় যেসব রোগবালাই হয়ে থাকে এবার খুবই কম পরিমাণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত