১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি সফলের প্রস্তুতি বিএনপিতে

১০ বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বন্টন

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

যুগপৎ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে ৪ ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঘোষিত এ কর্মসূচিতে যুগপৎভাবে পালন করবে সমমনা আরও ৩৭টি দল। গত ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলের পর এবার ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচিও সফল করতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে একমত পোষণকারী ৩২টি দলের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ৫টি দল। এরমধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের অধীনে চারটি দল এবং মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানিয়েছেন, আগামী ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি সফলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার বিষয়ে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যামূলক আলোচনা সভা শুরু করেছে বিএনপি। গত ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এক কর্মসূচি ৭১টি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে চলবে ১০ তারিখ পর্যন্ত। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকছেন। এর মধ্যদিয়ে আগামী দিনের যুগপৎ কর্মসূচি জোরদার করার আশা করছেন বিএনপি নেতারা।

দলীয় সূত্র মতে, ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি সফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা হলেন- কুমিল্লা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ময়মনসিংহ বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

ঢাকা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। খুলনা বিভাগের দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক-সম্পাদক। রাজশাহী বিভাগের দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ফরিদপুর বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং সমন্বয়কারি সাংগঠনিক সম্পাদকও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

বরিশাল বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। রংপুর বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর-রশিদ এবং সমন্বয়কারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমন্বয় সহযোগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়াও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন- স্ব স্ব বিভাগের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, সাবেক এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিব, জেলা-মহানগর বিএনপির সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিব-১ম যুগ্ম আহ্বায়ক। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখা নিয়ে জেলা ও মহানগরে আয়োজিত আলোচনা সভায় জেলা-মহানগরের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব নেতা, সাবেক এমপি, জেলা নির্বাহী কমিটির সব নেতা, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের ৫ জন শীর্ষ নেতা, সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলার ৫ জন এবং পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এ উদ্যোগকে এরইমধ্যে দলটির নেতারা বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। সূত্র মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার পাবনা, দিনাজপুর, মেহেরপুর, খাগড়াছড়িতে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ঘোষিত ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্রকাঠামো রূপরেখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসময় তিনি দাবি ও রূপরেখার বিষয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং মতামত গ্রহণ করেন। এতে স্থানীয় নেতারাও বক্তব্য দেন। এদিকে আগামী দিনের যুগপৎ কর্মসূচি জোরদার করতে, বিশেষ করে ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচি সফলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপির লিঁয়াজো কমিটির নেতারা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে চলছে নতুন অন্যান্য দলকেও সম্পৃক্ত করার কাজ। এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিঁয়াজো কমিটি। এতে দলটি বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দলটি। একইভাবে মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’ ও বিএনপি লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক হয়। এতে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সমন্নয়ক কমরেড হারুন চৌধুরীসহ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা অংশ নেন। এসময় বিএনপির ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে একমত পোষণ করে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। আগামী ১১ জানুয়ারির কর্মসূচিও তারা পালনের ঘোষণা দেয়।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের দলগুলো হচ্ছে- সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এবং প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক দল। এর আগে ২০ দলীয় জোটের সাবেক শরিকদের নিয়ে গঠিত ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারে ৭টি দল বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। এছাড়া পুরানো শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এলডিপি আলাদাভাবে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত আছে। সব মিলিয়ে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৩৭টি দল যুক্ত হয়েছে। সরকারবিরোধী অন্য দলের সঙ্গেও বিএনপির যোগাযোগ অব্যাহত আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।