প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজে স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছুটির দিনে অন্য নারীদেরও শেখান তিনি। বলছি পটুয়াখালী সদর উপজেলার চর জৈনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লেডি বাইকার অহিদা পাপড়ির কথা। তিনি শহরের থানাপাড়া এলাকার ফরহাদ হোসেন খানের স্ত্রী। পর্দা করে প্রশিক্ষণ করানোয় শহরের নারীদের পাশাপাশি অন্য উপজেলার নারীরাও আসছেন প্রশিক্ষণ নিতে। তার ‘লেডি বাইকার’ নামের ফেসবুক পেজ দেখে বর্তমানে জেলা পেরিয়ে বিভাগ এমনকি রাজধানী থেকেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নারীরা। এতে করে অনেকে সাবলম্বী হয়েছে। নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এখন বাইক চালিয়ে নিদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পেয়ে খুশি তারা। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার পরে পটুয়াখালী শহরের ঝাউবন, সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসক বাংলো এলাকায় প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় পাপড়িকে। দিনে বিদ্যালয়ে শিশুদের ক্লাস নিতে ব্যস্ত পাপড়ি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়েও রাতে স্কুটি প্রশিক্ষণ দেন নারীদের। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ থাকায় দিনের বেলা পটুয়াখালী খেলার মাঠ ও কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্র (এয়ারপোর্ট) এলাকায় এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ৬৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অহিদা পাপড়ি। পর্দা করে প্রশিক্ষণ দেয়ার কারণে অনেক নারী উদ্বুুদ্ব হচ্ছেন স্কুটি প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণের জন্য দুটি স্কুটি রয়েছে তার। এ ছাড়াও নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
প্রশিক্ষক অহিদা পাপড়ি বলেন, আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আমার বিদ্যালয় বাসা থেকে অনেক দূরে। সেখানে যেতে হলে রিকশা নিয়ে যেতে হয়। তারপর আবার মাঝে মাঝে আমার সন্তানদের স্কুলে নামিয়ে দিতে হয়। এই কথা চিন্তা করে আমি নিজে স্কুটি চালানোর উদ্যোগ নিই। আমার স্বামীও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। দুজনেই ব্যস্ত থাকায় উভয়ের সুবিধার্থে এই স্কুটি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি সহজে চলাচল করছি। তিনি আরও জানান, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়ার কারণে অন্য নারীদেরও এই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক মেয়ে মোটরসাইকেল বা স্কুটি চালাতে শিখতে চান কিন্তু ভালো ও নারী প্রশিক্ষক না থাকায় এত দিন সেভাবে আর শেখা হতো না তাদের। যে কারণে পটুয়াখালীতে এর চাহিদা রয়েছে। পাপড়ি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লেডি বাইকার পটুয়াখালী’ নামে একটি পেজ খুলে সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য আহ্বান করি। বাইকের জ্বালানি ও মেরামত খরচ চালাতে হয়। তাই খুবই সামান্য পরিমাণ রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে থাকি প্রশিক্ষণের জন্য। দিনের বেলা আমি যেহেতু পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকি, এ জন্য রাতের বেলা এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এতে অনেক কর্মজীবী নারী যারা দিনে ব্যস্ত থাকেন তারা রাতের বেলায় প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। এছাড়াও অনেকে আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থনীতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে। লেডি বাইকার পাপড়ি বলেন, আমি ৫ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিই। যেহেতু আমার স্বামী ও আমি দুজনই শিক্ষকতা পেশায় আছি, তাই সন্তাদের সঠিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিতে কষ্ট হতো। এ ছাড়াও বাসা থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি থাকায় রিকশা ভাড়া বেশি প্রয়োজন হতো। এই দুর্ভোগ কমানোর জন্যই স্বামীর কাছ থেকে স্কুটি প্রশিক্ষণ নিই। এখন নিজের স্কুলে যাওয়ার পথে সন্তানদের নিজেই স্কুলে নামিয়ে দিই। আবার স্কুল থেকে ফেরার পথে তাদের নিজেই নিয়ে আসি। ছুটিতে ঘুরতে যাওয়া ও কেনাকাটা করতে সন্তানদের নিয়ে একাই স্কুটি চালিয়ে মার্কেটে চলে যাই। সুবিধাজনক হওয়ায় শহরের অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করতে নিজেই লেডি বাইকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলি। বর্তমানে বেশ সাড়া পাচ্ছি।