অমাবস্যা বলে রাতের আকাশে চাঁদ ছিল না। কিন্তু ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য্য যেন চাঁদের আলোকেও হার মানিয়েছে। দুই’ একটি ফুল নয়, শত শত ফুল, একবারে এত পরিমাণে ফুটন্তফুল সচরাচর কোনো গাছে কিংবা বাগানে দেখা যায় না। দেখে বোঝার উপায় নেই- এটি ড্রাগনের ফুল নাকি কোনো পদ্ম বিল বা পদ্ম ফুল। এমন ফুলের সমারোহ তৈরি হয়েছে খুলনার পাইকগাছা পৌর সদরের ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান পল্টুর বাড়ির ছাদের উপর। রাত ৯-১০টার পরে ফুল ফোটা শুরু করে এবং রাতের মধ্যে প্রায় সব ফুল ফুটে যায়। কিন্তু সূূর্য ওঠার পর সব ফুল ধীরে ধীরে গুটিয়ে যায়। যে ফুল গুটিয়ে যায় তা আর ফুটন্ত অবস্থায় ফিরে আসে না। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হলেও কৃষি কাজে তেমন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। তবে শখের বসে তিনি ৩ বছর আগে বোনের বাসা থেকে কয়েকটি ড্রাগনের ডাল এনে নিজের বাসার ছাদের উপর ড্রামে লাগান। সেই গাছ বৃদ্ধি হতে থাকলে তার ডাল থেকে তিনি ড্রাগন লাগানোর পরিধি বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে পুরা ছাদ জুড়েই রয়েছে ড্রাগনের গাছ। ফলও ধরছে প্রচুর। নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে সরবরাহ করছে উৎপাদিত ড্রাগন। সকলের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভারেও সাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই ড্রাগন চাষ করা যায়। জমির আইলে কিংবা বাড়ির আঙিনা অথবা ছাদের উপরও ড্রাগন চাষ করা যায়। ড্রাগন চাষে যেমন খুব বেশি পরিচর্যা লাগে না, তেমনি কম খরচে অনেক বেশি উৎপাদন হয়। ড্রাগনে প্রচুর পুষ্টিগুণাগুন রয়েছে। এতে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল হজমে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ড্রাগন ফল হলো প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি ফল। এর ক্যালরি মাত্রাও তুলনামূলক অনেকটাই কম। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। এক কাপ (২২৭ গ্রাম) ড্রাগন ফলে, ক্যালোরির মাত্রা ১৩৬, প্রোটিনের মাত্রা ৩ গ্রাম, ফ্যাটের মাত্রা শূন্য, ফাইবারের মাত্রা ৭ গ্রাম, আয়রনের মাত্রা ৮ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা ১৮ শতাংশ, ভিটামিন-সি এর মাত্রা ৯ শতাংশ, ভিটামিনই এর মাত্রা ৪শতাংশ। এটি ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটাসায়ানিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এগুলি কোষগুলোকে ফ্রি ব্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া ড্রাগন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁঁকি কমায়, চোখের ক্ষেত্রে উপকারী, হার্টের জন্য উপকারী, বার্ধক্যের চিহ্ন প্রতিরোধ করে, হজমের জন্য ভালো, গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে উপকারিতা ও হাড়ের জন্য ভালো। কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ছাদ কৃষিতে ড্রাগন চাষ করে ব্যবসায়ী পল্টু সফল হয়েছেন। তার ড্রাগন চাষ দেখে অনেকেই ছাদ কৃষি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের ছাদ বাগানে পরিবারের পুষ্টিচাহিদা অনেকাংশে পুরণ হয়ে থাকে।
সাইদুর রহমান পল্টু জানান, আমার পুরাছাদ জুড়েই এখন ড্রাগন গাছ। এক সঙ্গে যখন ফুল ফোটে তখন মনে হয় এটি যেন কোনো ফুলের রাজ্য। আবার ফলও হয় প্রচুর। বছরে দুইবার ফল হয়, যে ফল হয় তার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ফল আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে সরবরাহ ও বিক্রি করি। এতে করে ভালো টাকা হাতে আসে। আমার ছাদে ড্রাগন গাছ দেখে অনেকেই বাসার ছাদে ড্রাগন গাছ লাগিয়ে উদ্যমী হয়েছে এবং তারাও সফল হয়েছে।