পানির অপর নাম জীবন। শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে দৈনিক ৮ গ্লাস পানি নারী-পুরুষ উভয়েরই পান করা জরুরি। এর চেয়ে কম পরিমাণে পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন বা পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করলে শারীরিক বভিন্ন সমস্যাসহ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডিমনেশিয়ার ঝুঁকি কমবে। একই সঙ্গে আয়ু বাড়তে পারে অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত। এমনটিই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা।
গবেষকরা বলছেন, দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করার মাধ্যমে বার্ধক্যকে ধীর করা সম্ভব। ৩০ এর বেশি বয়স্ক মোট ১১ হাজার মানুষের রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা ট্র্যাক করা হয়েছে এই গবেষণায়। এটি ইবিওমেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়। দেখা গেছে, পানি কম পান করলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে মধ্যবয়সিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা ও স্ট্রোকের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬৪ শতাংশ বেশি। গবেষকরা দেখেছেন, শুধু কম মাত্রায় পানি পান করার কারণে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদেরও কম বয়সে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল। গবেষকরা পূর্ববর্তী গবেষণা হাইলাইট করেছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল পর্যাপ্ত পানি পান করলে আয়ু ১৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। গবেষণা বলেছে, যারা নিয়মিত ৮ গ্লাস পানি পান করেন তারাই বেশিদিন বাঁচেন। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, শরীরে পানির ঘাটতি হলে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রদাহ বাড়ে। এমনকি বার্ধক্য প্রক্রিয়াও দ্রুত হয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) গবেষক, প্রধান লেখক ডা. নাটালিয়া দিমিত্রিভা গবেষণার বিষয়ে জানান, ফলাফল ইঙ্গিত করে যে সঠিক হাইড্রেশন বার্ধক্যকে কমিয়ে দিতে পারে ও রোগমুক্ত জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। তিনি বলেন, ‘দৈনিক সুপারিশকৃত পানির মাত্রা পূরণে পানির পাশাপাশি তাজা ফলের রস’সহ তরল খাবারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।’ এক্ষেত্রে পানি, কম চর্বিযুক্ত দুধ ও চিনিমুক্ত পানীয়, চা ও কফি সবই তরলের মধ্যেই গণনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিহাইড্রেশন বা পানির ঘাটতির কারণে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরেই শরীর পানিশূন্যতায় ভুগলে কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনিতে পাথর’সহ ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে, ভারসাম্যহীন ইলেক্ট্রোলাইটস যেমন- পটাসিয়াম বা সোডিয়াম ডিহাইড্রেশনের কারণে পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে। অন্যদিকে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যায় ও অক্সিজেন সরবরাহও কমে যায়। ফলে শরীরে শক তৈরি হতে পারে। তবে অত্যধিক পানি পান করাও কিন্তু বিপজ্জনক হতে পারে। এর ফলে কোষগুলো হাইপোনেট্রেমিয়া নামে পরিচিত অবস্থায় ফুলে যায়। কুংফু কিংবদন্তি ব্রুস লি, অতিরিক্ত পানি পান করার কারণেই কিন্তু মারা যান বলে ধারণা করা হয়। সূত্র : ডেইলি মেইল