সুসংবাদ প্রতিদিন

চরে কম খরচে কেনাফ চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাহফুজ খন্দকার, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাট জাতীয় ফসল কেনাফ চাষ। কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কেনাফ চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের পলিমাখা বালুজমিতে কেনাফ বীজ ছিটিয়ে আন্তঃপরিচর্চা, সার, কীটনাশক ছাড়াই আবাদ হচ্ছে ফসলটি। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ কেনাফ চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে অনেকেই।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের উৎপাদন আশানুরূপ হওয়ায় এবার ৫০০ একর জমিতে চাষের টার্গেট নেয়া হয়েছে। চলতি বছর চিলমারী উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ একর জমিতে কেনাফ বীজ আবাদ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আরও কেনাফ চাষ বাড়ছে।

মূলতঃ কেনাফ আঁশ থেকে কাগজের পাল্প বা মন্ড তৈরি করে নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, কেনাফ খড়ি হার্ডবোর্ড বা পার্টেক্স মিলের কাঁচামাল ও চারকোল তৈরিতে, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, তেল উৎপাদন এবং বিদেশে প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ইনটেরিয়র কাজের ইনস্যুলেটর হিসেবে কেনাফ ব্যবহার সম্ভব।

সূত্র আরও জানায়, প্রতি হেক্টর কেনাফ ফসল বাতাস থেকে প্রায় ১৪.৬৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং ১০.৬৬ টন অক্সিজেন নিঃসরণ করে বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রাখে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ মৌসুমে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চল বনগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে পাট জাতীয় প্রজাতি কেনাফ বীজ চাষ করা হয়। শুরুতেই লাভবান হওয়ায় এবছর বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ৬টি ব্লকে কেনাফ বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম হাতে নেয়। ফলে ব্লকের বাইরে প্রায় ২০০ একর জমিতে কেনাফ চাষ করা হয়। এটি চাষ করতে তেমন কোনো খরচ করতে হয় না। ডালজাতীয় ফসলের সঙ্গে কিংবা ফুলকপি, বাঁধাকপি কিংবা বেগুনের সঙ্গেও সাথী ফসল হিসেবে এটি চাষ করা যায়। এজন্য নিড়ানি, আন্তঃপরিচর্চা, কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। অল্প সার দিলেই হয়। গায়ে কাঁটা থাকায় গবাদিপশু আক্রমণ করতে পারে না। একরে উৎপাদন ১০ থেকে ১২ মণ। ৪ মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায় থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কৃষক মাঠ দিবসসহ বিভিন্নভাবে কৃষকের মাঝে কুড়িগ্রামে কেনাফ চাষের বিপুল সম্ভাবনা তুলে ধরে তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

চিলমারী উপজেলার বনগ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, পাট চাষের চেয়েও অতি সহজে কেনাফ বীজ বা কেনাফ চাষ করা যায়। এতে খরচ অনেক কম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। তাই এবারে তিনি ১৭.৫ একর জমিতে কেনাফ লাগিয়েছেন।

একই গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, বিশ্বাসই করতে পারিনি কেনাফ চাষ করে এতো লাভ হবে। গ্রামের কুদ্দুস ভাইয়ের লাভ দেখে এবার আমিও ৩ একর জমিতে কেনাফ চাষ করছি। আশা করছি, আমিও লাভের মুখ দেখতে পারব।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিশান দাস বলেন, অপ্রচলিত কেনাফ ফসল চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। এটি সম্প্রসারণে কৃষকদের পাশে থাকবে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুট ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে তোষাপাটের সাথে এই অঞ্চলে কেনাফ বীজ চাষ করা হয়। দেখা গেছে এক শতকে ৬ কেজি পর্যন্ত কেনাফ বীজ উৎপাদন করা যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা আগ্রহী হওয়ায় এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (উইং) ড. নার্গিস আক্তার বলেন, দেশি পাট ও তোষা পাটের চেয়ে কেনাফের সুবিধাটা হলো এতে কৃষকের কোন বাড়তি খরচ করতে হয় না। উর্বর বালু মাটিতেও এটি উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে বেগুন ক্ষেত, বাঁধাকপির সারিতেও কেনাফ বীজ বা কেনাফ উৎপাদন করা যায়।