ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যটন মৌসুমেও চালু হয়নি টেকনাফ সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ১১ সংগঠনের
পর্যটন মৌসুমেও চালু হয়নি টেকনাফ সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি না দেওায় অন্তত ৫ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে। বেকার সময় পার করছে জাহাজ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ট্যুর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এই পথে দ্রুত জাহাজ চলাচলের দ্রুত অনুমতি চান পর্যটন সেবায় জড়িতরা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে তারা। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১১টি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। বক্তারা বলেন, চলতি ভরা পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ। কিন্তু মিয়ানমারের মালামাল পরিবহণ ঠিকই চলছে। নব্যতার সংকট থাকলে মিয়ানমার থেকে জাহাজ কীভাবে আসে? চার দিন আগেও মিয়ানমারের দুটি জাহাজ ভাটার মধ্যে টেকনাফ বন্দরে ভিড়েছে, যা বর্তমানে দমদমিয়া ঘাটে অবস্থান করছে। নাব্যতার সংকট থাকলে জাহাজগুলো এলো কেমনে? সমস্যা কী শুধু টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে? এমন বিমাতাসুলভ ভূমিকা দেশের জন্য ক্ষতিকর। পর্যটন ও অর্থনীতির ‘বারোটা’ বাজাবে। টুয়াক সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে যতসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করে, তার অধিকাংশ পর্যটকই সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। যেহেতু সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা মূল ভূখণ্ড হতে ১৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপথে যাতায়াত করা সহজসাধ্য নয় বিধায় প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকায় পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারেন। আর এই পর্যটকদের ভ্রমণসেবা প্রদান করে ট্যুর অপারেটরদের পাশাপাশি ট্যুর গাইড, হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ, রেস্টহাউজ, ফ্ল্যাট ও কটেজ ব্যবসায়ী-কর্মচারী, বাস-মিনিবাস ব্যবসায়ী-কর্মচারী, রেস্টুরেন্ট ও ফুড প্রসেসিং ব্যবসায়ী-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভ্যান- রিকশা-টমটম চালক এবং বিভিন্ন প্রকারের কুটির শিল্প ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার পথও প্রায় রুদ্ধ। গত কয়েক বছর ধরে সেন্টমার্টিন নিয়ে নানামুখী অপপ্রচার চলছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পর্যটকদের কক্সবাজারবিমুখ করতে একটি চক্র লেগে আছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটক গেলে নাকি পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এখানে নব্যতার সংকট আছে! এসব অবাস্তব যুক্তি মেনে নেয়া যায় না। আসলে পরিবেশ হলো এমন একটি জিনিস, যা আমাদের পারিপার্শ্বিকতা তৈরি করে এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ক্ষমতা প্রদান করে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তা সব মিলিয়েই তৈরি হয় আমাদের পরিবেশ। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যের আলো, বন্ধুবান্ধব এসব কিছু মিলিয়েই তৈরি হয় পরিবেশ। মানুষকে বাদ দিয়ে পরিবেশ হতে পারে না। আবার মানুষরাই পরিবেশ ধ্বংস করছে, এটাও সত্য কথা। কিন্তু পর্যটন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের স্বার্থেই সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে টুয়াক পরিবেশ রক্ষায় ইউএনডিপির সহায়তায় জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে।

পর্যটন ব্যবসাকে টেকসই করার জন্য সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে পরিবেশ রক্ষার নামে এক শ্রেণির মানুষ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বলে নেতারা অভিযোগ করেন। তারা বছরে সুপার পিক যে দিন সেদিন সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে বলে মানুষের ভারে সেন্টমার্টিন ডুবে যাবে! টুয়াকের পর্যটন ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তোহার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন আনোয়ার কামাল। তার তথ্য মতে, ২০১৯ সালে নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন। অর্থাৎ, ১৫১ দিন পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬৩ জন মানুষ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। সেখানে অতিরিক্ত মাত্র ১ হাজার মানুষ বেশি গেলে কী সমস্যা? জীবন-জীবিকা ঠিক রাখার স্বার্থে এই নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও মানুষের যাতায়াত কিন্তু বন্ধ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের বোটে বা স্পিড বোটে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ যাতায়াত করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে পর্যটন শিল্পে মারাত্মক আঘাত আসবে। অনিশ্চয়তায় পড়বে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। আর্থিক অনটনের মধ্যে অনেকে নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে, যা এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবক্ষয় বয়ে আনবে। পর্যটকদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চালু অনুমতি প্রদানের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান টুয়াকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা। জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয়া না হলে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল। তিনি কক্সবাজার বাঁচাতে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা কামনা করেন এবং পর্যটনের দ্বার খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ, কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাং ছৈয়দুল হক কোম্পানি, টুয়াকের সাধারণ সম্পাদক একেএম মুনিবুর রহমান (টিটু), সি-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এসএম আবু নোমান, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম ডালিম, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান, টুয়াকের উপদেষ্টা কামরুল ইসলাম, এসএম কিবরিয়া খান, সেন্টমার্টিন আবাসিক হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম জিহাদি, ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সভাপতি শাহ আলম, সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ, বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত