প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থগিত জাপান সফর আগামী এপ্রিলে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক এম. নজরুল ইসলাম শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তাকে মার্চ অথবা এপ্রিলে জাপান সফরের প্রস্তাব দেন।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেখ হাসিনা ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণে সহযোগিতা দেয়ার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, মেট্রোরেলের অন্যান্য লাইন নির্মাণে জাপান তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল ব্যাপক জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমুদ্রসৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়ার জন্য জাপানের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, সাবরাং পর্যটন স্পটটি শুধুমাত্র বিদেশি পর্যটকদের জন্য উৎসর্গীকৃত।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের আশপাশে থাকা এ অঞ্চলের ৩৫০ কোটি মানুষের বিশাল বাজারের সুবিধা নিতে পারে।
তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, এ টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি জাপানি কোম্পানিকে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বন্ধু। জাপান তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছেও প্রিয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে ১৯৭৩ সালে জাপান সফর করেছিলেন।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের সম্পর্কের উল্লেখ করে জাপানের রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্ক হবে কৌশলগত সম্পর্ক।’
তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে জাপান-বাংলাদেশ কাঠামোর কার্যক্রম জোরদার করতে কাজ করবেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগ আনতে কাজ করবেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় যে, রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে। তিনি আশ্বাস দেন যে, ‘জাপান দ্বিপক্ষীয় এবং আসিয়ান ফোরামের মাধ্যমে বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রম জোরদার করবে এবং এ লক্ষ্যে জাইকা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, কিছু জাপানি এনজিওকে এসব ক্ষেত্রে কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর এবং জাপানের নারুতো শহরের মধ্যে সহায়তা জোরদার করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।