ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরু লুট লাশ উদ্ধার

‘৯৯৯’ ফোন করেও মিলেনি পুলিশের সহযোগিতা

‘৯৯৯’ ফোন করেও মিলেনি পুলিশের সহযোগিতা

কক্সবাজারের রামুতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের গরু লুট ঠেকাতে ফোন করা হয়েছিল ‘৯৯৯’ নম্বরে। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব ১ কিলোমিটার হলেও পুলিশ পৌঁছতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা। আর এর মধ্যে মালিকসহ জনতাকে গুলি করে দুটি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। আর সকালে ঘটনাস্থলের পাশেই মিলেছে এক যুবকের লাশ।

গরুর মালিকসহ গ্রামবাসীর দাবি, ডাকাতরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এ যুবককে। আর পুলিশ বলেছে, গরু ডাকাতি আর লাশ উদ্ধার ভিন্ন ঘটনা। গতকাল সকাল ৭টার দিকে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার এক সবজি ক্ষেতে মীর কাশেম (৩২) নামের এ যুবকের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে। অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়াল ঘরে থাকা সাতটি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এ সময় বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুকসহ পরিবারের

সদস্যরা ছুটাছুটি শুরু করেন। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাত দল সাতটি গরু গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে। এ সময় তারা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ডাকাত দল ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক। ঘটনার পর থেকে তার ভাতিজা মীর কাশেম নিখোঁজ ছিল। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের লাশ পাশর্^বর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যায়।

তিনি জানান, মীর কাশেমের লাশের দুই হাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার জানান, ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘণ্টারও বেশি পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯ এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, চুরি হলে আমরা কী করব, ডাকাতি হলে আসতাম। এ সময় স্কুলছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলেন। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। এছাড়া গভীর রাতে হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিল। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুই ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেঁধে রাখার চেষ্টা চালায়। এ সময় তিনি একজন ধরে রাখলে আরো চার ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় দুটি গরু নিয়ে ডাকাত দল গাড়িযোগে সটকে পড়ে।

রামু থানার পরির্দশক (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার লাশ পাওয়া গেছে সকালে। দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

আর ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোনের করার সত্যতা স্বীকার করে ওসি জানান, ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার আগেই পুলিশ গরু লুট ঠেকাতে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। আর পুলিশ কাউকে বকাঝকা করার বিষয়টি সত্য হতে পারে না। কেন না, পুলিশ সদস্যের পোশাকে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত