বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বমন্দায় ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিলেও আশার সঞ্চার করেছে অপ্রচলিত বাজার। ১৭টি নতুন দেশে অন্তত ৪ হাজার মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলেছেন, প্রচলিত বাজার তথা ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে নতুন বাজারগুলো থেকে বাড়তি অর্ডার আসায় সার্বিকভাবে রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। আর এই পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়েছে ।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা বলেছেন, আগে ইউরোপ-আমেরিকান বায়ারদের পণ্য তৈরি করা হতো। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট শুরুর পর এসব দেশের ক্রয় অর্ডার কমে যায়। তবে ২০২২ সালে ভারত-জাপান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি করে বেশ আয় হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সর্বশেষ যে পূর্বাভাস দিয়েছে, সেখানে ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অর্থনীতির দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও পাকিস্তানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হবে ২শতাংশ; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ভুটানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, নেপালে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ নেগেটিভ (মাইনাস) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। সংস্থাটি মনে করে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রফতানি আয়ের নতুন রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করেছে তৈরি পোশাক খাত। একই সঙ্গে তা নভেম্বরে হওয়া রেকর্ড ভেঙেছে। গতমাসে ৯ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা একক মাসের হিসাবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের পোশাক অপেক্ষাকৃত বেশি হারে রপ্তানি হওয়া এবং চীনসহ প্রধান প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় বাজারগুলো থেকে বেশি হারে রপ্তানি আদেশ পাওয়া গত মাসে রেকর্ড রপ্তানির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ি বছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে ৪৫ হাজার ৭০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩৫ হাজার ৮১১ মিলিয়ন ডলার। শুধু নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আয় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তথ্য বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার ৬৬০ মিলিয়ন ডলার নিটওয়্যার এবং ১০ হাজার ৩৪০ ডলারের ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এখন পর্যন্ত একক আধিপত্য ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক খাত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
বিজিএমইএ সূত্র জানাচ্ছে, জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে স্পেন এবং ফ্রান্সে আমাদের রপ্তানি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২২-২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে ৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়েরে তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ১১ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং ৭৭৪ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’
‘প্রচলিত বাজারগুলো ছাড়াও অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে রপ্তানি ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৭৫৪ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারতেও আমাদের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ৫৪৮ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার।’ বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের অপ্রচলিত বাজার আটটি। ভারত, রাশিয়া, জাপানসহ বাজারগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা।
