একাই দশজনের খাবার খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারেন ময়মনসিংহের এক যুবক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে রীতিমতো হৈচৈ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভাইরাল যুবকের এমন কাণ্ডে কেউ তাকে পাগল বলছে আবার কেউ বলছে পেটুক। কিন্তু এ নিয়ে তার কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। কারণ এটি তার আয়ের উৎস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে তার এসব ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে লাখ লাখ। এতে তার প্রতি মাসে আয় হচ্ছে এক লাখ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা। ফলে বেশি বেশি খেতে পারাই এখন তার আয়ের মাধ্যম। ভাইরাল খাদক ওই যুবকের নাম মো. আব্দুল্লাহ আলম নোমান। সে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত আ. কুদ্দুসের ছেলে। বর্তমানে সে কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায় ফাজিলে অধ্যয়নরত। জানা যায়, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ আলম নোমান সবার ছোট। বাবা ছিলেন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য। ছোট বেলায় বাবা মারা যাবার পর মায়ের তত্ত্বাবধানে কিছুটা অর্থকষ্টে বড় হয়েছে নোমান। তবে বর্তমানে নিজের আয়ের টাকায় মাকে নিয়ে ভালোই চলছে তার জীবন। তবে খাবার খেয়ে ভাইরাল হওয়ার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০২০ সালে করোনার সময়ে সারা দেশের মানুষের ন্যায় ঘরবন্দি হয়ে পড়ে নোমানও। তখন ঘরে বসে মোবাইল ফোনেই কাটত তার সময়। হঠাৎ একদিন কোরিয়ান এক ব্যক্তির খাওয়ার ভিডিওতে লক্ষ কোটি ভিউ দেখে টপিকটি ভালো লাগে তার। কারণ ছোট বেলা থেকেই খাবারের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বেশ। ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে কিছু করার ভাসনা থেকে বেশি বেশি খাবার খেয়ে ভাইরাল হওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে সেও। এরপর ইচ্ছামাফিক কাজ শুরু করে একাই পাঁচ বা দশজনের খাবার খেয়ে ভিডিও বানিয়ে তা ফেইসবুক পেইজে আপলোড করতে থাকে। কিন্তু প্রথম দিকে তার এসব ভিডিওতে খুব একটা সাড়া পড়েনি। এতে সে হতাশ হলেও হাল ছাড়েনি। এরই মাঝে হঠাৎ একদিন তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এতে তার মনে নতুন করে খুশি ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। বানাতে থাকে আরও বেশি বেশি ভিডিও। ফলে বর্তমানে তার ফেইসবুক পেইজে প্রায় ছয় লক্ষধিক ফলোয়ার এবং ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার প্রায় সাত লক্ষাধিক। এতে প্রতি মাসে বর্তমানে তার আয় হচ্ছে এক লক্ষ বা দেড় লক্ষাধিক টাকা। অবশ্য তার এই খাবারের পেছনে প্রতি মাসে তাকে খরচ করতে হচ্ছে দশ থেকে পনের হাজার টাকার অধিক। তবে বর্তমানে তার আয়ের টাকায় ভিডিও তৈরি, আপলোড ও এডেটিংয়ের জন্য কিনেছেন একটি আইফোন ও একটি কম্পিউটার। সেই সঙ্গে দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় বাজারে তার আয়ের টাকায় দু’তলা একটি ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিয়মিত করছেন ভিডিও তৈরির কাজ। ফেইসবুকে ‘বিডি বেস্ট এভার ফুড’ নামের পেইজটি নোমনের। এতে দেখা যায় তার তৈরি খাবারের নানা ভিডিওতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ ভিউ। কমেন্টস বক্সে আছে নেটিজেনদের হাজার হাজার পরামর্শমূলক ও মজাদার কমেন্টস। এসব ভিডিওতে নোমান কখনো খাচ্ছেন আস্তু মুরগি, খাসির নলি, চিনা হাঁস ভুনা বা কখনও একশত কোয়েল পাখির ডিম ইত্যাদি। আর এসব খাবারের পাশে রয়েছে প্লেট ভর্তি ঝাল কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ। যা টপাটপ গিলে সাবার করছে সে। আর নোমানের এসব খাবার অতি যত্নে সুস্বাধু করে রান্না করে পরিবেশন করে দেন তার বড় বোন মোছা: মনোয়ারা বেগম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আলম নোমান বলেন, যে কোনো সফলতার পেছনে থাকে কষ্ট, একাগ্রতা ও পরিশ্রম। আমারও তাই হয়েছে। খাবার খেয়ে ভাইরাল হই আবার টাকাও উপার্জন করি? এটা নিয়ে অনেকেই অবাক হয়। কিন্তু এর পেছনে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়। যেমন- কষ্ট করে খাবার খেতে হয়, এরপর অনেক কষ্ট করে ভিডিও তৈরি, আকর্ষণীয় করতে এডেটিংসহ অনেক কিছু করতে হয়। সেই সঙ্গে একটি খাবার খাওয়ার পর আরেকটি খাবারের মেন্যু তৈরি, সংগ্রহ ও উপযোগী রান্নাসহ নানা কাজে অনেক পরিশ্রমের সঙ্গে নিয়মিত লেগে থাকতে হয়। মোট কথা, আজকের এই পর্যন্ত আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট করতে হয়েছে। যা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ সময় নোমান আরও বলেন, বর্তমান দেশে চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। চাইলেই সহজে চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন। এই অবস্থায় ঘরে বসে আয় করতে হলে যার যে যোগ্যতা আছে, তা নিয়ে ভালো কিছু করতে পারলে আমার মতো টাকা উপার্জন করা সম্ভব।