জমজমাট নাটাই-ঘুড়ির বিকিকিনি

পুরান ঢাকায় আজ শুরু হচ্ছে দুই দিনের সাকরাইন উৎসব

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকায় আজ শুরু হচ্ছে দুইদিনের সাকরাইন উৎসব। পুরান ঢাকাবাসীর কাছে সাকরাইন বা পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। সাকরাইন উপলক্ষ্যে শাঁখারীবাজারে জমজমাট হয়ে উঠেছে নাটাই-ঘুড়ির দোকানগুলো। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই ভিড় করছেন সাকরাইনের অনুষঙ্গ নাটাই, ঘুড়ি ও সুতো কিনতে। বাহারি নাটাই, ঘুড়ি নিয়ে ক্রেতাদের জন্য পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরাও। গতকাল শাঁখারীবাজারের দোকানীরা জানান. ‘সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ঘুড়ি, নাটাই, সুতো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে বাহারি সব ঘুড়ি। দেশীয় লেজুড়ে ঘুড়ি ছাড়াও ভারত ও চীন থেকেও ঘুড়ি আমদানি করা হয়েছে। চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভ ঘুড়ি, তিন টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল বাহারি এসব নামের ঘুড়ি বেচা-বিক্রি জমে উঠে। ভারত ও চীন থেকে আসা মাছ, ফড়িং, স্পাইডারম্যানসহ নানা আকৃতির ঘুড়ি বিক্রিও ছিল জমজমাট। আকৃতি ভেদে দেশীয় ঘুড়ির দাম পাঁচ টাকা থেকে ৩০ টাকা। আর বিদেশি নকশা ঘুড়ির দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

একজন দোকানী জানান, ‘দেশীয় ঘুড়ি ছাড়াও চায়না ও ভারত থেকে ঘুড়ি আনা হয়েছে। আবার ঘর সাজানোর জন্যও ছোটো ঘুড়ি আছে। মানুষ পছন্দ করে নিচ্ছে। তবে দেশীয় ঘুড়ির চাহিদাই বেশি।’ ঘুড়ির পাশাপাশি রয়েছে নানা রকমের নাটাইও। কাঠ ও স্টিলের তৈরি বাটিওয়ালা, মুখবান্ধা, লোহা নাটাই, কাঠের নাটাই, চাবাডি নাটাই বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে ৮০ থেকে ৯০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে নাটাই। ঘুড়ি-নাটাইয়ের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে মাজন দেওয়া সুতা। সুতার মধ্যে রয়েছে, ড্রাগন সুতা, ভূত সুতা ও বিলাই সুতা। এসব সুতার অধিকাংশ এসেছে ভারত থেকে। সুতা ভেদে দাম ৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ছয় মাসে আগে ভারতে সুতা অর্ডার করা হয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই সুতা চলে আসে। আর নাটাই তৈরি হয় অধিকাংশই ধোলাইখালে। রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে আসা কে কিশোর জানান, ‘প্রতিবছরই সাকরাইনের আগে নাটাই-ঘুড়ি কিনতে শাঁখারীবাজার আসি। সাকরাইনের সময় ঘুড়ি কাটাকাটি হয়। তাই ভালো মানের সুতার দরকার হয়। ৩০০ টাকায় এক বান্ডিল সুতা আর ১০টা বড় ঘুড়ি কিনেছি।

নারিন্দা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসা আরেক কিশোর বলেন, ‘প্রতিবছরই ঘুড়ি কিনি সাকরাইন আসলে। ঘুড়ি ওড়াতে, কাটাকাটি করতে অনেক মজা লাগে। আমরা বন্ধুরা মিলে এবার ঘুড়ি উড়াবো। আট বান্ডিল সুতো নিয়েছি। ৩০টা ঘুড়ি নিয়েছি। নাটাই আগের বছরের আছে। তাই নাটাই কেনা হয়নি।’ বাংলা পঞ্জিকামতে পৌষ মাসের শেষের দিন পৌষ সংক্রান্তি পালিত হয়। সংক্রান্তি লোকমুখে বদলে লোকমুখে সাকরাইনে রূপ নিয়েছে।