ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করলেন প্রমোদতরী

নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করলেন প্রমোদতরী

ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে আসাম পর্যন্ত বিলাসবহুল প্রমোদতরী উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এই প্রমোদতরীর উদ্বোধন করেন। এই প্রমোদতরীর ভ্রমণের একটি অংশ হবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীর নাম গঙ্গা বিলাস। এতে থাকবে নদী-বিহারের ব্যবস্থা। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে বিশ্বের দীর্ঘতম নদী ক্রুজ এমভি গঙ্গা বিলাসের উদ্বোধন করেন। এই প্রমোদতরীর প্রথম যাত্রায় ৩২ জন সুইস পর্যটক অংশ নিয়েছেন এবং তারা বাংলাদেশ হয়ে আসামের ডিব্রুগড়ে পৌঁছাবেন। এমভি গঙ্গা বিলাস ভারতে তৈরি প্রথম ক্রুজ জাহাজ। এটি নদীপথে ৫১ দিনে মোট ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করবে। প্রথম যাত্রার অংশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের ৩২ জন পর্যটককে বারাণসী বন্দরে মালা এবং শেহনাইয়ের সুর দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ক্রুজে যাত্রা করার আগে তারা বারাণসীর বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করবেন। ক্রুজের পরিচালক রাজ সিং জানিয়েছেন, চলন্ত এই পাঁচ তারকা হোটেলে ৩৬ জন পর্যটকের ধারণক্ষমতাসহ ১৮টি স্যুট রয়েছে। এছাড়া এতে ৪০ জন ক্রু সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক এই প্রমোদতরীটির দৈর্ঘ্য ৬২ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার। ভারত ও বাংলাদেশের ২৭টি নদী দিয়ে যাবে বিলাসবহুল নৌযান গঙ্গা বিলাস। পথে পড়বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। পড়বে সুন্দরবনও কাজিরাঙার মতো বনভূমি। এ সবই দেখতে দেখতে চলবেন নৌযানের যাত্রীরা। এটাই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী-বিহার।

উত্তরপ্রদেশের পর্যটন মন্ত্রী জয়বীর সিংয়ের এক বিবৃেিত জানান, গঙ্গা বিলাস নামের ক্রুজটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, জাতীয় উদ্যান, নদীর ঘাট এবং বিহারের পাটনা, ঝাড়খণ্ডের শাহীগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, বাংলাদেশের ঢাকা, আসামের গুয়াহাটির মতো বড় শহরগুলোসহ ৫০টি পর্যটন গন্তব্য কভার করবে।

এছাড়া এই ক্রুজটিতে স্পা, সেলুন এবং জিমের মতো সুবিধাও রাখা হয়েছে। রাজ সিং বলেন, ক্রুজটিতে ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার রুপি খরচ হবে, আর ৫১ দিনের যাত্রার জন্য প্রতি যাত্রীর জন্য মোট খরচ হবে প্রায় ২০ লাখ রুপি। তিনি আরও বলেন, অত্যাধুনিক এই ক্রুজটি দূষণমুক্ত ব্যবস্থা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তিতে সজ্জিত। ভারতের কেন্দ্রীয় বন্দর শিপিং এবং জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘এই প্রমোদতরীতে ভ্রমণ বিদেশি পর্যটকদের সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা এবং ভারত ও বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিকতায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে।’

ভারতের সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অবশ্য এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। ক্রুজের ছবিসহ হিন্দিতে টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘এখন বিজেপি কি নাবিকদের চাকরিও কেড়ে নেবে? ধর্মীয় স্থানকে পর্যটন স্থান বানিয়ে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে বিজেপির নীতি নিন্দনীয়। মানুষ কাঁশীর আধ্যাত্মিক জাঁকজমক অনুভব করতে চায়, এখানে বিলাসিতা নয়। বিজেপি আর বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়ে আসল সমস্যা লুকিয়ে রাখতে পারবে না।’ অন্যদিকে সর্বানন্দ সোনোয়াল অবশ্য এই ক্রুজটিকে দেশের জলপথের উন্নয়নের উৎস করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের চূড়ান্ত পরিণতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের সুবিধার্থে ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ১০০টিরও বেশি জলপথ তৈরি করা হচ্ছে। তার দাবি, এটি আরও বেশি ক্রুজ পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। নদীর তীরে স্থানীয় ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। গঙ্গা বিলাসের যাত্রা শুরু হবে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে। সেখানে গঙ্গা আরতি দেখার পর চলতে শুরু করবে প্রমোদতরী। গাজিপুর, রামনগর, বক্সার হয়ে অষ্টম দিনে পৌঁছবে পাটনায়। ফারাক্কা ও মুর্শিদাবাদ হয়ে সুন্দরবন ঘুরে ২০তম দিনে পৌঁছবে কলকাতা। তার পরের দিনই তা বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করবে। বাংলাদেশে এক হাজার ১০০ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেবে এই প্রমোদতরী। সোনারগাঁও যাবে, ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখানো হবে। ঢাকা ও টাঙ্গাইল ছাড়াও প্রমোদতরী যাবে বাগেরহাট, হাড়বাড়িয়া, কটকা, মোড়লগঞ্জ, বরিশাল, মেঘনাঘাট, সিরাজগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, চিলমারি ও রংপুরে। এরপর ধুবরি, গুয়াহাটি, তেজপুর হয়ে আসামের ডিব্রুগড়। সেখানেই যাত্রা শেষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত