ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের ১৩তম দিন সরকারি ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। দর্শনার্থীর সমাগম বেশি হওয়ায় বেড়েছে বেচাকেনা। এতে অনেকটা খুশি মেলায় আগত বিভিন্ন স্টলের মালিক, দোকানি। তেমন খুশি মেলা আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও গেইট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। তবে মেলায় প্রবেশের প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে (বাইপাস সড়ক) দুপুর থেকে যানবাহনের চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার বিকালে মেলায় ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা স্থায়ী ভেন্যু পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে শুরু হয়েছে। শুরুর পর দিন থেকে প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘনকুয়াশা ও ১২তম দিন এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমাগামী মুসল্লিদের চাপ থাকায় এবং সড়কের উলুখোলা জোড়া পাম্প এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার কারণে ভোর থেকে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে ১২তম দিন গত বৃহস্পতিবার মেলায় লোকসমাগম তেমন দেখা যায়নি। তবে গতকাল সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির কারণে মেলায় সকালে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হলেও দুপুরের পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীর আগমন শুরু হয়। বিকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। লোক সমাগম বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় বেড়েছে বেচাকেনা। তবে এবারের মেলায় আন্তর্জাতিক মানের ভালো কোনো পণ্য না থাকায় এবং নিম্নমানের পণ্য মেলায় বেশি থাকায় অনেকটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।
মেলায় মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে আসা দর্শনার্থী সাহেদ খান বলেন, এ বাণিজ্য মেলা আগে হতো ঢাকার আগারগাঁওয়ে। গত বছর থেকে পূর্বাচলে স্থায়ী ভেন্যুতে হচ্ছে এ মেলা। রাজধানী থেকে এখানকার দূরত্ব বেশি, তাছাড়া পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসতে যানবাহনে বেশি ভাড়া দিতে হয়। সেখানে আমরা বিকাল হলে সহজে রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে অল্প ভাড়ায় যেতে পারতাম। মেলায় বনশ্রী এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী মনির হোসেন বলেন, মেলায় নিউ মার্কেটে বিক্রি করা হয় এমন পণ্যসামগ্রীতে সয়লাব। বাইরের থেকে মেলায় এসব সামগ্রীর দামটাও বেশি। এসব বিষয়ের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। এদিকে আগত মেলার দেশি ও বিদেশি ব্যবসায়ীরা জানান, মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্রবার দর্শনার্থীরা সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। বেচাকেনাও আশানুরূপ হয়েছিল। অন্যান্য দিনগুলোতে তেমন বেচাকেনা হয়নি। তবে ১৩তম দিন গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। মেলা প্রাণচাঞ্চল্য পুরোদমে ফিরে আসে। বেচাকেনাও অনেক ভালো হয়েছে। আগামী দিনগুলো এভাবে বেচাকেনা করতে পারলে লোকসানে আশঙ্কাটা কেটে যাবে বলে তারা দাবি করেন। এবারের মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি স্টলসহ দেশীয় ৩৩১টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালক রিনা বেগম জানান, মেলায় যেন কোনো নিম্নমানের মেয়াদউত্তীর্ণ খাবার পরিবেশন না করা হয়। সেজন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মেলায় নিম্নমানের, মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্য সামগ্রী বিক্রি, নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরিও পরিবেশনের দায়ে ৭টি খাবার হোটেলও রেস্টুরেন্টকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আরও জানান। মেলার গেইট ইজারা আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ছালাউদ্দিন ভূইয়া বলেন, গত ১২ দিন আমরা সবেমাত্র ১ লাখ ৬৭ হাজার টিকিট বিক্র করেছি। বৈরি আবহাওয়া, ইজতেমার জন্য লোক সমাগম তেমন হয়নি। তবে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় মেলায় আশানুরূপ দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। আশা রাখি, সামনের দিনগুলোতে এর ধারাবাহিকতা থাকবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় গতকাল শুক্রবার অনেক বেশি লোক হয়েছে। আশা রাখি এ ধারাবাহিকতা থাকবে। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা যেন কোন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে। এছাড়া বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ২৭০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে মেলার বিভিন্ন স্থানে।