টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

নানা নাটকীয়তার পর অবেশেষ সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি নিয়ম বেঁধে দিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুমতি পেয়ে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে ৬১০ জন পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন গেল ‘এমভি পারিজাত’ ও ‘রাজহংস’ নামে দুটি জাহাজ। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি জাহাজসহ পর্যটকবাহী পাঁচটি জাহাজ সেন্টমার্টিন পৌঁছেছে। সূত্রে জানা যায়, নাফনদীর নাব্যতাণ্ডসংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার অজুহাতে এবারের পর্যটন মৌসুমের শুরু হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে সংশ্লিষ্টরা। ফলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতে পারেনি। এতে কক্সবাজারবিমুখ হতে থাকে পর্যটকরা। এটিকে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সিংহভাগ সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এবারে সুযোগ না পাওয়ায় অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারেননি। এতে পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগে বঞ্চিত হয়েছেন পর্যটকরা। আর সরকারও হারিয়েছে প্রচুর রাজস্ব। এ অবস্থায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলের অনুমতির দাবি করা হয়। সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি দুপুরে ট্যুর অপারেটরস অব কক্সবাজার (টুয়াক) আয়োজিত ১১টি ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা দাবি করেন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন পর্যটন শিল্পকে ঘিরে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। যদি সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ থাকে তবে এসব মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এরপরই গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। সি-ক্রোজ অপারেটর অনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কায়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকে এসে হলেও টেকনাফ ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়ায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সমন্বয়ক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, জেলা প্রশাসনের সব সেক্টর ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাঙ্গে গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সবার মতামত ও সিদ্ধান্তে পরের দিন থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিবুর রহমান টিটু জানান, নাফ নদীর নাব্যতা সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার ধুয়া তুলে এবারের পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু নাফ নদীতে কোনো নাব্যতা ছিল না। বন্ধ থাকা এ সময়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এতকিছুর পরও যে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিলছে এটিই বড় কথা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপ) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রবালদ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন মৌসুমের ছয় মাসের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গেল তিন মাস পর্যাপ্ত পর্যটক সেন্টমার্টিন আসতে পারেনি। ফলে এখানকার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসী আনন্দিত।

সেন্টমার্টিনে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা (জোন ইনচার্জ) মনিরুল ইসলাম ভূঁয়া বলেন, গতকাল টেকনাফ থেকে দুটি জাহাজসহ পাঁচটি জাহাজে প্রায় তিন হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন এসেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে।