ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাক্ষাৎকারে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক

মেধাবী যোগ্য ও সাহসীদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি হবে

মেধাবী যোগ্য ও সাহসীদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি হবে

সম্প্রতি বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন রকিবুল ইসলাম বকুল। এর আগে তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য এবং খুলনা-৩ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গেও দীর্ঘবছর ধরে জড়িত ছিলেন। ৯০ এর দশকে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তৎকালীন সেই ছাত্রনেতা বর্তমানে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন। ‘আলোকিত বাংলাদেশ’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মামুন তুষারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সেই পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন।

আলোকিত বাংলাদেশ : গত ৬ বছর ধরে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদটি খালি ছিল। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ এবং মিডিয়াতে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি দায়িত্ব পেলেন- দেশ ও সংগঠনের এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদল নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

রকিবুল ইসলাম বকুল : ৬ বছর পর এ পদে মনোনিত হওয়া বিষয়টি এমন নয়। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি পার্টির চেয়ারপারসন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দলকে পুনর্গঠনের কাজে সময় দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একটি পর্যায়ে এসে এই পদটিতে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলে গ্রুপিং আছে, যেটা সব দলেই কম বেশি থাকে। এটা বড় সংগঠন। এজন্য মতভেদ, মতপার্থক্য, নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকবে। সর্বোপরি আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একসঙ্গে আছি এবং কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

আলোকিত বাংলাদেশ : আপনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় আপনাদের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে যেতে হয়েছে। সেই সময় আপনাদের দিনগুলো কেমন ছিল এবং বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সেই সময়ের দিনগুলোর কোনো মিল আছে কি না?

রকিবুল ইসলাম বকুল : আমরা যখন স্বৈরচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, তখন ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান ছিল। প্রতিটি ছাত্র সংগঠন তার স্বক্রিয়তা নিয়ে রাজনীতি করতে পারত। ওই সময় অনেক মেধাবী ছাত্ররাও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে শরীক হতো। দেশের স্বার্থে, ক্যাম্পাসের স্বার্থে এবং শিক্ষার স্বার্থে যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে আমরা করেছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন যেভাবে করা দরকার আমরা সাধ্যমতো করেছি। কিন্তু এখনকার এই প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখনকার এই ফ্যাসিস্ট সরকার ফ্যাসিজমের আধুনিক রূপ দিয়েছে। এখানে দিনের ভোট রাতে হয়। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে সেখানে একটা নতুন আইন করা হয়েছে। এখানে আমরা যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তা দেশের কাছে জনগণের কাছে পৌছে দেয়ার কাজটা করেন সাংবাদিকরা। সেটা পুরোপুরিভাবে বিভিন্ন কালো আইন দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। সরকার আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। এরকম একটা সময় আন্দোলন করাটা দুষ্কর। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছি। আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণ আমাদের সাথে আছে এটা একটা ইতিবাচক দিক।

আলোকিত বাংলাদেশ : ছাত্ররাজনীতির বর্তমান অবস্থাকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : ছাত্ররাজনীতিতে গুণতগতভাবে পরিবর্তন আনতে হলে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান থাকতে হবে। ছাত্র রাজনীতির মূল ক্ষেত্র হচ্ছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারলে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে হবে? বিভিন্ন ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল দখল করে রাখা হয়েছে বহিরাগতদের দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাস মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল রাজনীতি করতে পারে না। এমন হলে রাজনীতির মান কীভাবে বিবেচনা করবেন? এজন্য সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ছাত্র রাজনীতির গুণগত মান বাড়বে।

আলোকিত বাংলাদেশ : বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর সরকারে না থাকায় ছাত্রদলের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : ক্ষমতার সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। ছাত্রদল বা বিএনপির রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ক্ষমতার ব্যাপারটা জনগণ ম্যান্ডেট দেবে আপনি ক্ষমতায় যাবেন। এখানে যেহেতু জনগণের ভোটারাধিকার নেই, সেজন্য আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। পাশাপাশি আমরা জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করছি। আর ছাত্রদলের নিজস্ব রাজনীতি আছে। সেটা নিয়ে তারা রাজনীতি করে যাচ্ছে। আমরা মেধাবী ছাত্রদেরকে নিয়ে যোগ্য একটা নেতৃত্ব তৈরি করেছি। বিগত দুটি কমিটি আমরা নির্ধারিত সময়ে করতে পেরেছি। আগামীতেও আমরা নির্দিষ্ট মেয়াদে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কমিটি করব।

আলোকিত বাংলাদেশ : কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষিত হলো এবং দেখা গেল বাংলাদেশের অপরাপর দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের বয়সের মাঝে বড় ব্যবধান। ছাত্রলীগের সভাপতি যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র সেখানে ছাত্রদলের সভাপতি ২০০৩-০৪ সেশনের। তাদের মধ্যে ৮ বছরের ব্যবধান। আপনার কী মনে হয় শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করার ব্যাপারে বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যাপার কখনও কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

রকিবুল ইসলাম বকুল : ছাত্রলীগ কী করল, সেটা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় না। ছাত্রদলকে আমরা পর্যায়ক্রমে সুন্দর একটি সিস্টেমে আনার চেষ্টা করছি। ছাত্রদের সাথে সম্পৃক্ততার ব্যাপারটা নিয়ে আগেও বলেছি, যেখানে শিক্ষাঙ্গণে আমাদের ঢুকতে দেয়া হয় না। লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা-মামলা করা হয়। সেখানে তো পরিবেশই নেই। এরপরও আমরা যেভাবে পারি সেভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং তাদের ছাত্রদলে আসার জন্য আকৃষ্ট করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, অঞ্চলপ্রীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুই নেতার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

রকিবুল ইসলাম বকুল : অভিযোগ আছে কোথায় আমার জানা নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহৎ সংগঠনে মতোভেদ থাকবে। এটাকে বড় করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি কিছু কুৎসা তো রটবেই। কাজ করলে বদনাম হবে। না করলে তো কোনো বদনামই হবে না। এটাকে আমি বড় করে দেখি না। আমরা যেটা দেখি, বর্তমান ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল অংশগ্রহণ করতে পারছে কি পারছে না, ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ছাত্রদল কাজ করতে পারছে কি না, এটাই আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়। যেহেতু ছাত্রদলের রাজনীতি ছাত্রদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন এজন্য তারা ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করতে পারছে কি পারছে না সেটাই মুখ্য বিষয়। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেই ছাত্রদের নিয়েই আমাদের ছাত্রদল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সবগুলোতেই ছাত্রদলের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

আলোকিত বাংলাদেশ : বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ও যোগ্যদের বাদ দিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের ও ব্যক্তিগত অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করার অভিযোগ আছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেমন নেতৃত্ব হওয়া দরকার?

রকিবুল ইসলাম বকুল : একটি জিনিস বলা দরকার, আমাদের বড় সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা সবসময় বেশি। একটা পদে আমাদের অনেক প্রার্থী থাকে। কিন্তু নেতৃত্বে আসবে একজন। পাঁচজন প্রার্থী থাকলে একজন নির্বাচিত হবে, বাদ যাবে চারজন। এটাই নিয়ম। এটাকে আমরা নেতিবাচক হিসেবে দেখি না। আমরা দেখি, ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পেরেছি কি না। এক্ষেত্রে অনেকেই বাদ যেতে পারে। তাদের আমরা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে রেখেছি। এটাকে আমরা কোন্দল হিসেবে দেখি না।

আলোকিত বাংলাদেশ : ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে যে বিদ্যাপীঠকে বিবেচনা করা হয়, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোনো কার্যক্রম নেই। বর্তমান কমিটির ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন আছে কি?

রকিবুল ইসলাম বকুল : এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি ব্যাপারটি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।

আলোকিত বাংলাদেশ : ছাত্রদলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

রকিবুল ইসলাম বকুল : আমি যেহেতু ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলাম, তৃণমূলের রাজনীতি থেকে আমার যাত্রা শুরু। হল রাজনীতি করেছি। সুতারং, এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট আর আগের প্রেক্ষাপট এক নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলকে নতুন করে মেধাবীদের দিয়ে, যোগ্যদের এবং সাহসীদের দিয়ে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা আছে। যোগ্যতার ভিত্তিতেই আগামী দিনে ছাত্রদলের নেতৃত্ব আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত