ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘রংপুরে নেতাকর্মীরা যাতে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে এক ও অভিন্ন থাকে, সে চষ্টা করব’

‘রংপুরে নেতাকর্মীরা যাতে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে এক ও অভিন্ন থাকে, সে চষ্টা করব’

সুজিত রায় নন্দী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দুই দফায় দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের হাত ধরেই রাজনীতিতে পথচলা তার। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ২০১২ সালেও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৬ সালে সুজিত রায় নন্দী ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালেও ফের তিনি একই পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলটি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তাকে রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুরে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার বিষয় ও দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন সুজিত রায় নন্দী। তার সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গ।

প্রশ্ন : স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই?  

সুজিত রায় নন্দী : ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাব। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা যখন আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দেয়া হয়েছিল, তখন অনেকেই কটাক্ষ করেছিল। যারা অপরাজনীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, তারাই কটাক্ষ করেছে। তারা পদ্মাসেতুকে নিয়েও কটাক্ষ করেছিল। উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। আজকের দিনে তারাই আবার এই সুবিধাগুলো ভোগ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মেধা-দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে আগামী দিনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে। দেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিটি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট ইন্ডাস্ট্রি, স্মার্ট গভমেন্ট গড়ার লক্ষ্যেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কোন লক্ষ্যে আগাবে? 

সুজিত রায় নন্দী : আগামী দিনে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- দেশকে রক্ষা করা। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনাই। শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা না থাকলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে। সে কারণে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা নিয়ে আসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। এটা আমাদের মুখ্য কাজ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যতদিন ঐকবদ্ধ থাকবে, পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগের অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে। আমাদের দেশের বিরোধী দল সবসময় অপরাজনীতি করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশের সামরিক স্বৈরাচার এবং বেসামরিক স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় ছিল। জাতিকে তারা উল্লেখযোগ্য কোনো উপহার দিতে পারেনি। বারবার ক্ষমতায় এসে তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পরপরই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কঠিন সমস্যাকে সমাধান করে, সত্য ও সুন্দরের বিজয়ের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন : নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কি না?  

সুজিত রায় নন্দী : ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বিশ্বের উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় কারো নেই। করোনা মহামারিতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হিমশিম খেয়েছে। আমরা দেখেছি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক  মহামারি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। লকডাউনে মানুষের কষ্ট হয়েছে, তবে একটি লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা। উন্নত দেশগুলো বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার করোনার ৪ ডোজ টিকা দিচ্ছে বিনাপয়সায়। এটা পৃথিবীর বুকে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। 

প্রশ্ন : রংপুরের জাতীয় পার্টির একটা আধিপত্য রয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন? 

সুজিত রায় নন্দী : রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। সাংগঠনিক অবস্থার দিক দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের যথেষ্ট শক্ত অবস্থান রয়েছে। আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। রংপুরে কিছু সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। অনেকের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে; সেটা স্বাভাবিক। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে  ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করব। আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই যাতে এক ও অভিন্ন থাকে, সেই চেষ্টা করব। এজন্য আমাদের সবাইকে ক্ষুদ্র স্বার্থকে পরিহার করে বৃহৎ স্বার্থের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থ, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা পরীক্ষিত। তারা দলের পিঠে ছুরিকাঘাত করে না। যারা অনুপ্রবেশকারীরা দলের অভ্যন্তরে ঢুকে দলের ভেতরে তারা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে রংপুরে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। তাহলেই আমরা দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারব।

প্রশ্ন : নির্বাচনি বছরে আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা কি?

সুজিত রায় নন্দী :  নির্বাচনি বছরে আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত রাখা। দেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সেটাকে ব্যাপকভাবে মানুষের সামনে প্রচার করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় থাকার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, সেই বিষয়গুলো তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে তুলে ধরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যাপারে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আপষহীন। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধু কন্যার সহকর্মী। সেই মনোভাব নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। দেশের উন্নয়ন- অগ্রযাত্রাকে অক্ষুন্ন রাখা।

প্রশ্ন : জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোনো দাবি তুলবে কি না?

সুজিত রায় নন্দী : আওয়ামী লীগ সব সময় সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার। আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সবসময় নীতি ও আদর্শের বাইরে কখনোই চিন্তা করে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষয়ে আমাদের অবস্থান সবসময়ই সুদৃঢ়। স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় কঠিন এবং আমরা সে ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। জামায়াতে ইসলামের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।

প্রশ্ন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে, সে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগত্যা পাবে বলে মনে করেন?

সুজিত রায় নন্দী : রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে আসার যেমন অধিকার আছে, তেমনি নির্বাচনে না আসারও অধিকার রয়েছে। এটাও গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে আমরা আশা করব আগামী সংসদ নির্বাচনে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। পৃথিবীর সব দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

প্রশ্ন : নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে কোন কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে আপনি মনে করেন?

সুজিত রায় নন্দী : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদেরকেই মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে, যারা নস্যাৎ করতে চায়, সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদণ্ডসন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বদা সর্তক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন সেক্টরে সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। যারা অপরাজনীতি করে, প্রতিহিংসার রাজনীতি করে, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা, স্তব্ধ করে দেয়া। সেই কারণে আমাদের সবাইকে এক এবং অভিন্ন থাকতে হবে। শুধু রংপুর বিভাগ নয়, আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীর দায়িত্ব হচ্ছে দলকে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ রাখা। শৃঙ্খলা ও ঐক্য না থাকলে কোনো দলই সফল হতে পারে না। আমাদের শৃঙ্খলা ও ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত