দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ অনুসন্ধানে নামছে দুদক

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হবে। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের চিঠি হাতে পেলেই মাঠে নামবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

গতকাল মঙ্গলবার দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি সুপ্রিমকোর্ট আমাদের তদন্ত করতে বলেছে। আদেশটা এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। তদন্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হবে। দেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে থাকলে আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

এর আগে গত রোববার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাসের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে দুবাইতে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইউজে) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

‘দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রপার্টি’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস আবেদনটি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলেফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি, আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪এডিএস) সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে সম্পত্তি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি।

২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি সম্পত্তি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে এর মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা সম্পদের অর্থমূল্য এখন কম করে হলেও এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। করোনাকালীন বিপত্তির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন বাংলাদেশিরা।

দুবাইয়ের ভূমি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় দুবাইয়ে বাংলাদেশি ধনীরাই সবচেয়ে বেশি সম্পদ কিনেছেন। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা।

দেশের বিত্তবানদের কাছে দীর্ঘদিন দুবাইয়ের আকর্ষণ ছিল নিছক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ আকর্ষণ রূপ নিয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন লগ্নির কেন্দ্র হিসেবে। দুবাইয়ে আকর্ষণীয় মুনাফার খোঁজে রিয়েল এস্টেট ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছেন অনেকে। দেশের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই দুবাইকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।

২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দেশের নির্মাণ খাতের ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ী দুবাই চলে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। দেশের ব্যবসা থেকে উপার্জিত মুনাফা প্রতিনিয়ত দুবাইয়ে স্থানান্তর করছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি দুবাইয়ের আবাসন ও নির্মাণ খাতে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন যে কোনোভাবে হোক বিদেশ থেকে পুঁজির প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এজন্য বিদেশি ধনীদের স্থানান্তরিত হতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যকর ও শক্তিশালী কোনো ব্যবস্থা গড়তে না পারায় এখান থেকে দুবাইয়ে অর্থপাচার বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।