অন্যরকম

শহরের সব বাড়ি নীল রঙে সজ্জিত

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জাদুর শহর যোধপুর। জয়পুর থেকে ৩৫০ কিমি. দূরত্বে অবস্থিত এই শহর অমোঘ এক হাতছানির নাম ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে। শোনা যায়, এক সময় বর্ণভেদ প্রথার কারণে এই শহরের সব বাড়ি নীল রঙে সজ্জিত হয়েছিল, তাই একে আজও নীল শহর বলেই ডাকা হয়। ইতিহাস অনুযায়ী, প্রাচীন মারওয়াড় রাজ্যের রাজধানী ছিল এই যোধপুর। আর এখন রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বলা হয়, মরু দেশে প্রবেশের দরজাও এই শহরের মধ্যেই। রাঠোর বংশের রাজপুতপ্রধান রাও যোধা ১৪৫৯ সালে এই শহর প্রতিষ্ঠা করেন। শীত পড়ে গেছে বেশ, ছুটির মরশুম সমাগত। স্কুলের ছুটি, অফিসের কম কাজ সামলে যদি মন ইতিহাসের নীল গন্ধ পেতে চায় তাহলে স্থাপত্যের গাম্ভীর্যে আর নিরিবিলিতে অনেকটা সময় কাটাতে হলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন যোধপুরের দিকে। জাদুর এই শহর চোখ আর মন দুই জুড়িয়ে দিতে বাধ্য।

মেহেরানগড় ফোর্ট : যোধপুরের মেহেরানগড় দুর্গ ১৫ শতকের ভারতীয় স্থাপত্যের নিদর্শন। প্রাচীন এই দুর্গটি রাজপুত রাজা রাও যোধার আমলে ব্লু সিটির মানুষকে রক্ষা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। দুর্গের প্রবেশদ্বারে ৭টি দরজা আছে- বিজয় গেট, ফতেহ গেট, গোপাল গেট, ভৈরব গেট, দেখ কামরা গেট, মাটি গেট এবং লোহা গেট। এসব ‘গেট’ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। গোটা দুর্গের দেওয়ালে প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকর্ম খোদাই করা হয়েছে। প্রাসাদ, সৈন্যবাহিনী, মন্দির, ঘরবাড়ি নিয়ে একসময় জমজমাট এই দুর্গ মুঘলদের কাছেও অজেয় ছিল।

এই দুর্গের সচেয়ে সুন্দর মহলগুলি হলো- শিশমহল, যা রাজা অজিত সিং প্রায় হাজারের বেশি আয়না দিয়ে তৈরি করেছিলেন। যার একটা আয়নায় আলো পড়লেই পুরো মহল ঝলমল করে উঠত। এছাড়া রয়েছে ফুলমহল, যা অজিত সিংয়ের পুত্র অভয় সিং সোনা, রুপা এবং বিভিন্ন মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি ফুল দিয়ে গড়েছিলেন। চোখ ফেরানো যায় না এই মহলের কারুকার্য থেকে।

উমেদ ভবন প্যালেস : যোধপুরের আরেকটি আকর্ষণ হলো এই প্যালেস। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসভবনের মধ্যে এই প্রাসাদ অন্যতম। বলা হয়, পৃথিবীতে এই একটি প্রাসাদই তৈরি হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে। বাকি সব প্রাসাদ তার থেকে প্রাচীন। যোধপুরের অন্যতম আকর্ষণ উমেদ প্যালেসের একটি অংশে পরিবার নিয়ে থাকেন মহারাজা গজ সিং দ্বিতীয়। বাকি অংশে আছে সংগ্রহশালা। এখন বিলাসবহুল হোটেল। রক্ষণাবেক্ষণ করে তাজ গ্রুপ। কথিত আছে, ১৯২৯ সালে মহারাজা উমেদ সিং খরাগ্রস্ত প্রজাদের রোজগারের সুবিধার জন্য এই প্যালেস গড়ে তোলেন। প্রায় ৩ হাজার প্রজা ১৩ বছর ধরে পরিশ্রম করে তৈরি করেন এই অভিনব প্যালেস। মোট ৩৪৭টি ঘর আছে এই প্যালেসে। ২৬ একর জমির উপর বিস্তৃত এই প্রাসাদে রাজকীয় জীবনযাপনের সব উপকরণ মজুত। রাজদরবার, বিশাল ভোজনকক্ষ, নাচের ঘর, পাঠাগার, একাধিক সুইমিং পুল, স্পা, বিলিয়ার্ড খেলার ঘর, টেনিস ও স্কোয়াশ খেলার কোর্ট-সহ বিলাসিতার অঢেল আয়োজন। প্রাসাদ তৈরির উপকরণ আনানোর জন্য আস্ত রেললাইনই বসিয়ে ফেলেছিলেন রাজা উমেদ সিং।

যশবন্ত থাড়া : সিটির আরও একটি আকর্ষণ এই জাদুঘর যশবন্ত থাড়া। ১৮৯৯ সালে মহারাজা সর্দার সিং তার পিতা মহারাজা যশবন্ত সিংয়ের স্মরণে শ্বেতপাথরের এই স্মারক সৌধ নির্মাণ করেছিলেন। সৌধের ভেতরে মহারাজা যশবন্তের একটি বড় ছবি রাখা আছে। এছাড়া আছে একটি ছোট মন্দির, সাজানো বাগান এবং সৌধের প্রবেশপথে একটি সুন্দর হ্রদ। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখিদের দেখা মেলে। কথিত আছে, রামায়ণে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীর বাবার বাড়ির এলাকা এই মান্দোর, অর্থাৎ রাবণের শ্বশুরবাড়ির এলাকা। বিস্তৃত মান্দোর গার্ডেনে রয়েছে উঁচু পাথরের পাহাড়ি ছাদ, যা এটিকে একটি জনপ্রিয় স্থানীয় আকর্ষণ করে তুলেছে। যোধপুরের প্রাক্তন শাসকদের স্মৃতিসৌধও এখানে দেখা যায়। এই সৌধগুলো লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত। মান্দোর গার্ডেনে ‘দ্য শ্রাইন অব থ্রি হান্ড্রেড মিলিয়ন’ নামে বড় হলঘর আছে। মান্দোর গার্ডেনে একটি সরকারি জাদুঘরও রয়েছে, যা বিগত যুগের বিভিন্ন নিদর্শনগুলোর একটি চমৎকার সমাহার। কাছাকাছি পাহাড়ে উঠলে, প্রাসাদ এবং মান্দোর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। রাবণ মন্দিরও মান্দোরের অন্যতম আকর্ষণ।