সুসংবাদ প্রতিদিন
সিংড়ায় শুঁটকিতে লাখপতি
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অঞ্চলের দেশি মাছের শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশি মাছের শুঁটকির স্বাদ, ঘ্রাণ ও গুণগত মান ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং ভারতেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।
মৎস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংইন এলাকার কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে উপজেলার বৃহত্তম শুঁটকি পল্লি। এখানে রয়েছে পাঁচটি শুঁটকির চাতাল। এছাড়া উপজেলার জোলার বাতা, বড়িয়া ও এরকম সাতটি স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকি পল্লি। যেখানে কাজ করছেন শত শত নারী-পুরুষ। এতে করে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা লাখপতি হয়েছেন। শুধু শুঁটকি উৎপাদানকারীরা লাখপতি হয়নি এ অঞ্চলের শ্রমিকরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
শুঁটকি পল্লীর এসব চাতালে প্রতি মৌসুমে ২৩২ টন দেশি প্রজাতির মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে শুঁটকির পাইকারি বাজার সৈয়দপুরে প্রক্রিয়াজাত হয়ে এখন যাচ্ছে ভারতে।
নিংইন ও জোলার বাতা শুঁটকি পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, টেংরা, পুঁটি, বোয়াল, শোলসহ দেশি প্রজাতির মাছের শুঁটকি বাঁশের তৈরি বানার চাতালে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক দেয়া হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
শুঁটকি উৎপাদনকারী শাহ আলম বলেন, মাছের আড়ত থেকে বিভিন্ন দামে মাছ কিনে আমরা এ চাতালে আনি। এরপর মাছ কেটে পরিষ্কার করে রোদে শুকাই। শুকানো পর শুঁটকির মোকাম সৈয়দপুর নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে ভারতে রপ্তানি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে শুঁটকি কেনেন।
নিংইন শুঁটকি চাতালের মালিক দৌলত ও জয়নাল আবেদীন জানান, ৩ কেজি পুঁটি মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি চিংড়ি মাছে ১ কেজি, ৩ কেজি শোল মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি মলা মাছে ১ কেজি এবং সাড়ে ৩ কেজি গুজি মাছে ১ কেজি করে শুঁটকি পাওয়া যায়। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন খরচ কম হলেও দাম বেশি পাওয়া যায়। তারা আরো জানান, মাছের আড়তে গতবারের চেয়ে কাঁচা মাছ পাওয়া যাচ্ছে কম।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. শাহাদত হোসেন বলেন, শুঁটকি মাছ এখন রপ্তানিকারক একটি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুঁটকি মাছ বাজারজাত করা সম্ভব। চলনবিলের মিঠা পানির মাছ থেকে উৎপাদিত এখানকার শুঁটকির মান ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। যারা শুঁটকি উৎপাদন করছেন তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়। এ বছর চলনবিলে বর্ষার পানির ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটার কারণে মাছের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উৎপাদন হতে পারে। তবে যেহেতু শুঁটকির বড় বাজার সৈয়দপুর এবং এখান থেকে ভারতে রপ্তানি হয়। এখানকার শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ মৌসুমে শুঁটকির উৎপাদন কম হলেও উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন।