ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় উপচেড়া ভিড়
বেচাকেনা বাড়লেও লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রিয়াজ হোসেন, রূপগঞ্জ
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের শেষ মূহুর্তে ২০তম দিন ছুটির দিন শুক্রবার উপচেপড়া ভীড়। বেড়েছে বেচাকেনা। তবে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে তেমন বেচাকেনা করতে না পেরে অনেকটা লোকসানের মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে মেলায় চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত দর্শনাথীরা না আসায় ক্ষতির সম্মুখিন গেট ইজারা কর্তৃপক্ষও। তারা লোকসান কাটাতে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি করেছেন মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে মেলা শেষ করে হাসিমুখে বাড়ি ফিরবেন বলে দাবি করেছেন মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি। জানা যায়, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। এরপর থেকে সেখানে বসে মেলার ২৫টি আসর। তবে করোনার কারণে এক বছর মেলার আয়োজন বন্ধ থাকার পর বাণিজ্য মেলার প্রাচীণ ভেন্যু আগারগাঁও থেকে গত বছর বাণিজ্য মেলা চলে আসে রাজধানী থেকে বেশ খানিকটা দূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরের স্থায়ী ভেন্যু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে। গত বছর করোনার প্রভাব আর এ বছরের শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহ, বিশ্ব ইজতেমার কারণে সড়কে যানজট এমনকি রাজধানী থেকে মেলার ভেন্যু খানিকটা দূরে হওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার ছাড়া বিগত দিনগুলো তেমন লোকসমাগম ঘটেনি এ আসরে। তবে মেলা শুরু ১৫ দিন পর থেকে বেড়েছে লোকসমাগম। সঙ্গে বেড়েছে বেচাকেনা। তবে মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার মেলায় স্টল বরাদ্দ নেয়া হয়েছে অনেকটা বেশি দামে। তাছাড়া শুরু থেকে গত ১৫ দিনে ক্রেতা দর্শনার্থী তেমন দেখা যায়নি। ১৫ দিন পর থেকে লোক সমাগম কিছুটা বেড়েছে, বেড়েছে বেচাকেনা। তারা আরো বলেন, সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া মেলায় লোকসমাগত তেমন হচ্ছে না। রাজধানী থেকে খানিকটা দূরে, আসা-যাওয়ায় বাড়তি ভাড়া, মেলায় প্রবেশের প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে প্রতিদিন দুপুর হলেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। তাছাড়া টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্ব ও ২য় পর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসুল্লিদের অংশগ্রহণের প্রভাবে সৃষ্ট যানজটের কারণেও এখানে দূরদূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতাদর্শনার্থী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসছে না। সেজন্য তাদের লোকসানের আশঙ্কা অনেক বেশি মনে করছে। মেলায় উত্তরা থেকে আসা মঞ্জুদ্দোহা বলেন, রাজধানী থেকে খানিকটা দূরে এবং যাতায়াতের খরচ বেশি হওয়ায় মেলায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসা হচ্ছে না। রূপগঞ্জের রূপসী থেকে আসা সাদেক বলেন, মেলায় নিম্নমানের পণ্যের সয়লাব। তাছাড়া বাহির থেকে ভেতরে পণ্যসামগ্রীর দাম অনেক বেশি। সেজন্য কেনাকাটা না করে চলে যাচ্ছি। এবারের বাণিজ্য মেলায় পাকিস্তান, ভারত, চীন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ১০টি দেশের ১৭টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়নসহ ৩৩১টি স্টল রয়েছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তাছাড়া রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য প্রতিদিন ৭০টি বিআরটিসি শাটল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইপিবি। মেলার গেট ইজারা আব্দুল্যাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ছালাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে যে পরিমাণ দর্শনার্থী প্রবেশ করা কথা ছিল। সে অনুযায়ী দর্শনার্থী আসছে না মেলায়। রাজধানী থেকে খানিকটা দূরে, বৈরী আবহাওয়া ও মেলায় প্রবেশের প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজট থাকায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ইচ্ছা থাকলেও আসছে না এখানে। এদিকে ২০ দিনে মেলায় প্রবেশ করেছে মাত্র ৫ লাখ ২৫ হাজার ক্রেতাদর্শনার্থী। তবে বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে মেলার সময় কমপক্ষে ১০ দিন বাড়ানোর দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও ইজারা কর্তৃপক্ষ। মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয় ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় যে পরিমাণ দর্শনার্থীর আশা করেছি, সে পরিমাণ দর্শনার্থী মেলায় আসছে। দিন যত গড়াবে লোকসমাগম আরো বাড়বে। দিন শেষে মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা হাসিমুখে বাড়িতে ফিরবে বলে মনে করছি। অনেক দোকানদার মৌখিকভাবে আমাকে মেলা কিছুদিন বাড়ানোর জন্য বলেছে। তবে দোকানদার লিখিতভাবে যদি আমাদের আবেদন করেন তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।