সুসংবাদ প্রতিদিন : কম পরিশ্রমে লাভ বেশি
পাহাড়ে ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
পুষ্টিগুণে ভরা ও পশুখাদ্যের অন্যতম উপাদান হওয়ায় দিন দিন পার্বত্যজেলা খাগড়াছড়িতে ভুট্টার চাষ বাড়ছে। ভালো বাজারমূল্য পাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর ছাড়াও দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি উপজেলায় ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেকেই। অন্যদিকে কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় পাহাড়ে ভুট্টার চাষ বাড়ছে ।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
সদরের কমলছড়ি এলাকার ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, চেঙ্গী নদীর পারে ভুট্টা ক্ষেতে পাহাড়ি চাকমা নারীরা গাছ থেকে পরিপক্ক ভুট্টা সংগ্রহ করছে। তার কিছু দূর গেলে এক দল নারীরা মাটিতে বসে খোসা ছাড়ানো কাজে ব্যস্ত। তার পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকরা ভুট্টা বস্তা ভর্তি করে সড়কের পাশে রাখছেন।
খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি ভুট্টা চাষি জীবন চাকমা বলেন, এ ফলন ভালো হয়েছে। পরিচর্যা যত ভালো করা হয় ফলন তত ভালো হয়। এ বছর ছয় একক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এক একরে চার টন ফলন পাওয়া যায়। এক এককে খরচ হয় ৩৮ হাজার টাকা। ভুট্টা চট্টগ্রামে বিক্রি করা হয়। এখন দৈনিক ১০ জন শ্রমিক ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করছে ভুট্টা সংগ্রহসহ নানা কাজে। দৈনিক এক জন শ্রমিককে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়।
খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি এলাকার আর এক ভুট্টা চাষি প্রদীপ চাকমা বলেন, দুর্জয় ৫০২২ ও ডিকাল্ব ৯৫৮১ জাতের ভুট্টা চাষ করা হয়। পাহাড়ে দুর্জয় ৫০২২ সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়। আড়াই একর চাষি করেছি। একটি কাঁচা ভুট্টা ৪০০ গ্রাম ওজন হয়। কাঁচা ও পাকা অবস্থায় ভুট্টা বিক্রি করি। এক একরে কাঁচা ফলন পাঁচ হাজার কেজি হয়, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। এই চাষি বলেন, শীত মৌসুমে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। গত বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, তাই দাম ভালো পেয়েছে। এ বছর আরও বেশি দাম পাবো বলে চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভ ও পরিশ্রম কম। আমাদের কমলছড়িতে বড় আকারে আটজন ভুট্টা চাষ করে সবাই সফল হয়েছে। পানছড়ি উপজেলার ভুট্টা চাষি জগদিশ চাকমা বলেন, ভুট্টা চাষে খরচের চেয়ে দশ গুণের বেশি লাভ হয়। সমতল ভূমিতে ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মতুজ আলী বলেন, খাগড়াছড়িতে ভুট্টা চাষ বাড়ছে। চাষিরা বিভিন্ন সমস্য নিয়ে এলে আমরা খেত ঘুরে পরামর্শ দিই। ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধকরণে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষক আগামীতে ভুট্টা চাষ বাড়বে আশা করি। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা বলেন, পাহাড়ে ভুট্টা ফলন ভালো হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষকদের মাঝে ভুট্টা বীজ দিয়ে থাকি। তাতে কৃষকরা খুব খুশি হয়। মুক্তা চাকমা বলেন, পাহাড়ে ভুট্টার প্রচুর চাহিদা আছে। অফ সিজনেও করা যায়, ভালো ফলন আসবে। খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আনছে। পাহাড়িরা ভুট্টা সিদ্ধ করে খাই। পল্টি খামার ও মাছের খাদ্যে ভুট্টা গুঁড়া করে ব্যবহার করে থাকি। লাভজনক একটা ফসল এবং নিত্য নতুন জাত আবিষ্কার হচ্ছে। হাইব্রিড ভুট্টা জাতগুলো বেশি চাষ হচ্ছে। সাইজে বড়, ওজনে বেশি এবং খেতেও মজা।