ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

একনায়কতন্ত্রের দ্বারপ্রান্তে তুরস্ক

একনায়কতন্ত্রের দ্বারপ্রান্তে তুরস্ক

উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটোর মধ্যে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম। দেশটি অশান্ত প্রতিবেশি দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ায়। সম্প্রতি দেশটি পশ্চিম বলকান, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে। সর্বোপরি, এটি কৃষ্ণ সাগর ঘিরে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত বছর তুরস্ক বিশ্বে ইউক্রেনীয় শস্য পাঠানোর ব্যাপারে জাতিসংঘের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। তুরস্কের সাধারণ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান আভাস দিয়েছেন, চলতি বছরের ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আচরণ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে যখন এরদোয়ান দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তুরস্কের জন্য তিনি প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে বসেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ভয় ছিল, তার একটি অতিমাত্রায় ইসলামপন্থি এজেন্ডা ছিল। কিন্তু তিনি ও তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি এটি অনুসরণ করতে পারেননি। এরদোয়ানের ক্ষমতা নেয়ার পর প্রথম কয়েক বছর তার সরকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছে যেটি কয়েক দশক ধরে সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল। তিনি সেই জেনারেলদের প্রতিহত করেছিলেন যারা প্রায়ই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন এবং অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালান। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তিনি সংস্কার পথ বেছে নেন। এমনকি তিনি তুরস্কের সবচেয়ে বড় জাতিগত সংখ্যালঘু কুর্দিদের কাছে শান্তির অনুভূতিও প্রকাশ করেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর হাতে নিপীড়নের শিকার হন। ২০০৫ সালে তার বড় অর্জন যা তার সব পূর্বসূরীরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। সেটি হচ্ছে, তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়ে আলোচনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যতবেশি ক্ষমতায় থাকছেন তার ততবেশি ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাবও বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১১ বছর পর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং সেই আগের দুর্বল পদটিকে একটি প্রভাবশালী পদে পরিণত করতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর তিনি কয়েক হাজার লোককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। এই চক্রান্তের জন্য দায়ী ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগের নিছক অজুহাতে গ্রেপ্তারও করা হয় অনেককে। তিনি অবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এবং চেক ও ব্যালেন্স নষ্ট করেছেন। তিনি অনেক গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রীয় প্রচারের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। তিনি কার্যত ইন্টারনেট সেন্সর করেছেন। তিনি বিরোধী নেতাসহ অনেক সমালোচককে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। তিনি একে পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন, আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধীদের হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ আছে।

এরদোয়ান ক্ষমতার তৃতীয় দশকের কাছাকাছি এসে তার ক্রমবর্ধমান উদ্ভট ধারণা দ্রুত জনসাধারণের নীতিতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে, তিনি পূর্বে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর একটি আর্থিক তত্ত্ব চাপিয়েছেন যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। তিনি মনে করেন মুদ্রাস্ফীতির প্রতিকার হলো অর্থ সস্তা করা। তুর্কি মুদ্রাস্ফীতি ৬৪ শতাংশ হওয়ার এটাই প্রধান কারণ ছিল। ফলে দেশটিতে জীবনযাত্রার মান সংকুচিত হচ্ছে এবং উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষ করে শহরগুলোতে ভোটাররা পিছিয়ে পড়ছেন। ৩ বছর আগে এরদোয়ানের দল তিনটি বৃহত্তম শহর আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল এবং ইজমিরে মেয়র নির্বাচনে হেরে যায়। বিভিন্ন জরিপ বলছে, তিনি চার মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্টের পদ হারাতে পারেন, যদি বিরোধীরা তার সেরা প্রার্থীর পেছনে একত্রিত হয় এবং নির্বাচন কমবেশি স্বচ্ছ হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত