দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে ইউক্রেন পরিস্থিতি। পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার আশ্বাসে ইউক্রেন আশান্তিত হলেও এই সহায়তা কবে, কিভাবে পাওয়া যাবে তা নিয়ে নিশ্চিয়তা পাচ্ছে না কিয়েভ। মস্কোর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়েছে- ইউক্রেনে পশ্চিমের অস্ত্র সহায়তা বৈশ্বিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বৈশ্বিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সে দেশের লোকজন মৃত্যুর মুখে পড়বে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনকে সরবরাহ করা আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলোকে অসহনীয় করে তুলবে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ একজন মিত্র। গতকাল রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ?ডুমার স্পিকার ব্যাচেসøাভ ভোলোদিন এই মন্তব্য করেন। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের এই স্পিকার ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থন বিশ্বকে ‘ভয়াবহ যুদ্ধের’ দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে ভোলোদিন বলেছেন, যদি ওয়াশিংটন ও ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং এসব অস্ত্র বেসামরিক শহরগুলোতে আক্রমণ ও আমাদের অঞ্চলগুলো দখলের চেষ্টা করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা পরিস্থিতিকে আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো অতীতে স্থানীয় সংঘাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেনি এমন যুক্তি এখন অকার্যকর। কারণ এসব দেশ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি, যেখানে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি ছিল। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের জন্য বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। যদিও তারা জার্মানির তৈরি লেপার্ড যুদ্ধ ট্যাংক সরবরাহের বিষয়ে ভেটো প্রত্যাহারে জার্মানিকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। লেপার্ড যুদ্ধ ট্যাংক সরবরাহের বিষয়ে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো রাজি হলেও ইউক্রেনে তা পাঠানোর জন্য বার্লিনের অনুমোদন প্রয়োজন।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়া লড়াই করছে যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছে দেশটি। আর ইউক্রেনের দখলে নেয়া ভূখণ্ড কখনই ফেরত দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে মস্কো।
অন্যদিকে কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার আলোচনার জন্য উন্মুক্ত নয়। গত সপ্তাহে রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের একই ধরনের হুমকির পর ভোলোদিন এসব মন্তব্য করলেন। ৫৮ বছর বয়সী ভোলোদিন ২০১৬ সাল থেকে রাশিয়ার পার্লামেন্ট নিম্নকক্ষ স্টেট ডুমার স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রশাসনে দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত ছিলেন। পুতিনের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রেসিডেন্টের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
ভোলোদিন বলেছেন, কিয়েভ প্রশাসনের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করা হলে তা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বৈশ্বিক সিদ্ধান্তহীনতায়’ সেদেশের লোকজন মারা যাচ্ছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিপরীতে ইউক্রেনের সক্ষমতা জোরদার করতে লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত জার্মানি স্থগিত করার প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক এক টুইট বার্তায় বলেছেন, লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতার ফলে আমাদের আরও বেশি লোক মারা যাচ্ছে। যত দেরি হবে, তত বাড়বে ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু। তাই অবিলম্বে বিবেচনা করতে হবে।
বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশ শুক্রবার ইউক্রেনকে কয়েক’শ কোটি ডলার মূল্যের ভারী সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে আছে সাঁজোয়া যান এবং যুদ্ধাস্ত্র। তবে ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে জার্মানি। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ‘আমরা এখনো বলতে পারি না, কখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং সিদ্ধান্ত কী হবে। লেপার্ড ট্যাংকের কথা ওঠার পর এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, লেপার্ড ট্যাংক চায় ইউক্রেন। এটি জার্মানির তৈরি। শনিবার লাটভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডগারস রিংকেভিক্স তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি যৌথ বিবৃতি টুইট করেছেন। সেখানে তারা ‘এখনই ইউক্রেনকে লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহ করার’ জন্য জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, রুশ আগ্রাসন বন্ধ ও ইউরোপে দ্রুত শান্তি পুনরুদ্ধারে এটি সরবরাহ করা প্রয়োজন। জার্মানির বার্লিনে কয়েক শ মানুষ জার্মান কতৃপক্ষের প্রতি ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে ফেডারেল চ্যান্সেলারি ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেছে। তবে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানো বা অন্য দেশগুলোকে জার্মানির তৈরি ট্যাংক সরবরাহের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে বার্লিন বেশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানি লেপার্ড পাঠাতে সম্মত হবে, যদি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনকে সরবরাহ করে। কিন্তু ওয়াশিংটন বলেছে, প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের অসুবিধার কারণে আব্রামস ট্যাংক সরবরাহ করলেও, তাতে কোনো কাজ হবে না। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার রাশিয়া ২৬টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, শত্রুপক্ষ তাদের আগ্রাসী পরিকল্পনা পরিত্যাগ করছে না। বরং রুশ-ইউক্রেন সীমান্তের দোনেৎস্ক অঞ্চল পুরো দখলের ওপরই তারা এখন বেশি নজর দিচ্ছে।