২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এবার সবার নজর কেড়েছে ‘বিখ্যাত রাজা চা’ নামক স্টলে। মেলা শুরু প্রথম থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি চায়ের দোকান এটা। সকাল থেকে রাত অবধি যারা চা খেতে পছন্দ করেন সে সব চা প্রেমিকরা টোকেন নিয়ে চায়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন প্রিয় চায়ের অপেক্ষায়। অনেকে টোকেন দিয়ে নিয়ে তা পান করে মনের আত্মতৃপ্তি নিচ্ছেন। দোকানটাও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। দোকানের সামনে দিয়ে যেইভা যাচ্ছেন একবার হলে চোখ তুলে দেখছেন। দোকানে লাইটিং করা বড় ব্যানার। লেখা- রাজা চায়ের আড্ডা, বিখ্যাত রাজা চা। চা বানাচ্ছেন যে স্টাফরা তারাও বেশ ব্যস্ত। কথা বলারও সুযোগ নেই।
আর যিনি বিখ্যাত রাজা চায়ের দোকানের মালিক তিনি হলেন আজাহারউদ্দিন। বয়স হবে ৫০ বছরের মতো। বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামে। বাবা আলীম উদ্দিন। তবে সবার কাছে তিনি রাজা মামা বলেই পরিচিত। সকাল থেকে রাত অবধি সেই রাজা মামা স্টলের সামনে দ্রুতগতিতে হাঁটছেন। দর্শনার্থীরা তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন হাসিমুখে। কেউ বা সেলফি তোলার অপেক্ষায়। সবার প্রিয় ‘রাজা চায়ের’ মালিক আজাহারউদ্দিন রাজা মামা জানালেন তার সেই চায়ের গল্প।
তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে নানা নানা প্রতিকূলতা, সংগ্রাম করে আজ এই পর্যায়ে আসা। এক সময় ভ্যানে করে ফেরি করে টুকিটাকি জিনিস বিক্রি করেছেন তিনি। কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসেছিলেন। মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেছেন। কখনো বা তাকে রাত কাটাতে হয়েছে পাবলিক টয়লেটের ছাদে। থাকার জায়গা মেলেনি। মেলেনি তিনবেলা খাবার। অভাবে কাবু আজহার উদ্দিন টিকতে না পেরে জমি বিক্রি করে পাড়ি জমান দুবাইয়ে। সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে রাতদিন কাজ করেও সচ্ছলতা ফেরাতে পারেননি। কাজ করে যখন নিজার ভাগ্য ফেরাতে পারেনি সেজন্য কিছুদিন পর সিদ্ধান্ত নেন দেশে গিয়ে ব্যতিক্রমী চায়ের স্টল দেয়ার। ২০১৮ সনে দেশে ফিরেন। শুরু করেন চা বিক্রি। শুরুতে অনেকেই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছেন।
বলেছেন, এই ব্যতিক্রম চা কে খাবে? বললেন, এক সময় কত মানুষের কাছে কাজের জন্য অনুরোধ করেছি। পাইনি। আর এখন আমার এই চা বিক্রিতে কাজ করেন ৭২ জন। আট হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে লোকজন কাজ করেন আমার সঙ্গে। বর্তমানে সারা দেশে রয়েছে রাজা চায়ের ১৮ টি শাখা। তাকে কেন রাজা মামা বলে সবাই ডাকেন এবং রাজা চা কেন এত জনপ্রিয়তার সেটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এই চা দামে বেশি হলেও স্বাদে অনন্য, ভিন্নরকম। শুরুতে অনেকে উপহাস করলেও এখন সবাই গ্রহণ করেছেন।
কেউ কেউ তো বলেন, এটা রাজা-বাদশাদের চা। তাই হয়তো তারা আমাকে রাজা বলে ডাকতেই পছন্দ করেন। স্টলের সামনে দেখা গেল দেশি-বিদেশি পত্রিকার কাটিং ফ্রেমে ঝুলানো। নানা দেশের দর্শনার্থীরা তার স্টলে চা খেয়েছেন সেসব ছবি। তাকে নিয়ে করা সব পত্রিকার রিপোর্ট ঝুলছে স্টলের সামনে। তিনি জানান, তার চায়ে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, বিভিন্ন মসলা, গরুর দুধ ও গুঁড়া দুধ মেশানো হয়। তা বালুর তাপে গরম করা হয়। তিনি ব্যয়বহুল জাফরানও ব্যবহার করেন। এ কারণেই চা একটু ব্যতিক্রম। ৫০ টাকা কাপ চায়ের স্বাদ নিতে স্টলে রোজ এমন ভিড় হয়। চায়ের পাশাপাশি বিক্রি করেন ৫০ টাকা দামে শাহী পান সেটাও এখন বেশ জনপ্রিয়।
এর বাইরেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চা বিক্রি করেন তিনি। বললেন, আমি সার্থক। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে সব জেলায় স্টলের শাখা খোলার। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় সবার নজর কেড়েছে রাজা মামার এই রাজা চা। মেলায় আগত দর্শনার্থী মাছুদ চৌধুরী জানায়, রাজা চায়ের গল্প তিনি অনেক শুনেছেন। আজ নিজে পান করতে এসেছেন। বললেন, ভেবেছিলাম সাধারণ চা। কিন্তু না। একেবারেই অসাধারণ স্বাদ। তার দোকানের চায়ের পাশাপাশি শাহী পান ও বেশ মজাদার। মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব ইফতেখার এবারে বাণিজ্য মেলায় রাজা চা আসলে সকলের নজর কেড়েছে। চায়ের গুনগত মানও ভালো।