ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাঁকখালী নদীর পেটে দালান

বিস্ময় প্রকাশ বেলার প্রধান নির্বাহী
বাঁকখালী নদীর পেটে দালান

কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের মহোৎসব চলছে। নদীর তীরে ৬ শ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নিমার্ণের কাজ। শুধু মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নিমার্ণ।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দখলের দৃশ্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আদালতে যাওয়ার কথা বললেন। তাঁর সরেজমিনে পরিদর্শনের কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার ভুমি।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ জানান, খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মান করা হচ্ছে একটি সেতু। এই সেতুটি নির্মিত হলে খুরুশকুল ও বৃহত্তর ঈদগাঁও অঞ্চলের সঙ্গে শহরের বিকল্প সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। কিন্তু এই সেতুটিই যেন বাঁকখালী নদীটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরী হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে প্রভাবশালী চক্র। একে এক দখলের মহোৎসব চললেও প্রশাসন নিরব রয়েছে। তিনি জানান, এই নিরবতায় গত ২ মাসে নদীর শত হেক্টর জমি দখল করে তৈরী হয়েছে স্থাপনা। প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ডিসেম্বর মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর দখলদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করলেও থেমে নেই দখল তৎপরতা। আর এসব মামলায় কেউ গ্রেফতারও হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ এর পৃথক প্রতিবেদনে বাঁকখালী নদী দখলের সাথে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত করছে। যার মধ্যে নতুন নির্মিত সেতু ঘীরে দখলের মহোৎসবে জড়িত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। যাদের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলাও করেছে।

সরেজমিনে বাঁকখালী নদী পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পরিদর্শনে এসে দখলের দৃশ্যটি অত্যন্ত বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এদেশে নদী রক্ষার যে আইন গুলো আছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, উচ্চ আদালতের যে রায়গুলো আছে সেগুলো একেবারে অর্থহীন করে ফেলা হয়েছে। আালতের রায়ে বলা হয়েছে নদী হলো জীবন্তু সত্তা। মানুষকে হত্যা করলে যেমন শাস্তি হয়, সেরকম নদীকে হত্যা করলেও শাস্তি হবে। ব্রীজ থাকে নদীর উপরে, এখানে ব্রীজ হয়েছে বাড়ি ঘরের উপরে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখানে নদী রক্ষায় তৈরী করা বিশাল প্যারাবন নিধন করে ফেলা হয়েছে। এখানে যে ঘরবাড়ি তৈরী হচ্ছে যেখানে জোয়ারের পানি দেখা যাচ্ছে, নিধন করা প্যারাবনের গাছও দেখা যাচ্ছে। প্রকাশ্যে এ নদী হত্যায় আদালতের যে রায় আছে তার মতে কি বিচার হচ্ছে এটা দেখতে হবে। সরকার কেন মনে করছে এ রায় মানতে হবে না?’

বিষয়টি আবারও আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান বেলার এই প্রধান নির্বাহী।

বেলার প্রধান নির্বাহীর পরিদর্শন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর বিকাল ৪ টায় বাঁকখালী নদীর তীরের দখল স্থান পরিদর্শনে যান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সদরের সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. জিল্লুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় একটি নতুন স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, যে স্থাপনাটি উচ্ছেদ করা হয়েছে ওটাতে বনায়ন করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব অবৈধ দখল যে কোনভাবে উচ্ছেদ করা হবে। তবে দখল উচ্ছেদ নিয়ে কিছু আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নানা কারণে কিছু জমি খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় এই জটিলতা তৈরী হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, নদী রক্ষা কমিশন সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হচ্ছে। আইনী জটিলতা বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত