ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে ন্যাটোর দেশগুলো

ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে ন্যাটোর দেশগুলো

দিন দিন ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মোড় নিচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করার পর রুশ সৈন্যরা ইউক্রেন সৈন্যদের মোকাবিলা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। রুশ সৈন্যদের প্রতিহত ও হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনের প্রচুর ট্যাংক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি কিয়েভকে আধুনিক ক্ষেপনাস্ত্র সরবরাহ করার অঙ্গীকার করেছে। জার্মানি জানিয়েছে ইউরোপীয় ্ইউনিয়নের দেশগুলো তার দেশের তৈরি ক্ষেপনাস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, আজ হোক কিংবা কাল হোক ইউক্রেনের সামরিক অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো মেটাবে।

ইউক্রেনকে ট্যাংক দেয়ার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জার্মানি। এ জন্য দেশটি প্রশংসা পেলেও চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের অধীনে জার্মান সরকার এ ক্ষেত্রে অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শলৎজের গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত হয়েছেন।গত জানুয়ারিতে ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। তবে সেটি এসেছিল ফ্রান্সের একই ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণার পর।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর সপ্তম দিন থেকেই জার্মানির তৈরি লেপার্ড ট্যাংক দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি তাতে রাজি হয়নি। এমনকি অন্য দেশগুলোকেও তাদের তৈরি ট্যাংক পুনরায় রপ্তানির অনুমতি দেয়নি। গত ২০ জানুয়ারি জার্মানিতে থাকা মার্কিন ঘাঁটি রামস্টেইনে জড়ো হয়েছিলেন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। সেখানে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তির আশা করা হয়েছিল। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর সেদিনও রাজি হননি। তবে মিত্রদের পাশাপাশি দেশে নিজের জোটের ভেতর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে গত ২৫ জানুয়ারি অবশেষে সম্মতি দেন শলৎজ।

ইউক্রেনকে এখন ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। অন্য দেশগুলোকেও ওই ট্যাংক পাঠানোর অনুমতি দেবে তারা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ৪৫তম জন্মদিনে দারুণ উপহার হতে পারে এটি। যুক্তরাষ্ট্র আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে এই কয়েকদিন হলো। ফ্রান্সের এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ মাসের পর মাস না বলার পর সবেমাত্রই জানিয়েছেন, তারা লেক্লার ট্যাংক পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। যুক্তরাজ্য হয়তো নজির স্থাপনে আগ্রহী। দেশটি ১২ বা ১৪টি চ্যালেঞ্জার ট্যাংক পাঠাতে পারে ইউক্রেনে। তবে এ বিষয়ে লন্ডনও সক্রিয় হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এবং তারা যেসব ট্যাংক পাঠাবে যুদ্ধক্ষেত্রে সেগুলো খুব বেশি কাজে আসবে না। কারণ ইউরোপে সেগুলোর যন্ত্রাংশ ও গোলাবারুদের ভালো সরবরাহ ব্যবস্থা নেই।

ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিতে বিলম্বের কারণে জার্মানির অন্যতম কঠোর সমালোচক ছিল পোল্যান্ড। অথচ তারাও জার্মান ট্যাংক পুনঃরপ্তানির জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে মাত্র এই সপ্তাহে এসে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জার্মান চ্যান্সেলর যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, জার্মানির মতো যুক্তরাষ্ট্রও একই সময়ে ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ করুক। হতে পারে তিনি ভাবছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও ইউরোপে বড় ও শক্তিশালী উপস্থিতি থাকবে রাশিয়ার। সম্ভবত এর জন্যই সতর্ক থাকতে চান শলৎজ। ১৯৪১ সালে রাশিয়া আক্রমণ করেছিল জার্মানি। এবার আক্রমণকারী দেশ রাশিয়া। কোনো ভুক্তভোগীকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করা এবং আগ্রাসনের মধ্যে তুলনা চলে না। জার্মানির যেসব মানুষ এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন তারা তাদের দেশের ভয়ংকর ইতিহাস থেকে ভুল শিক্ষাই নিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত