ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

শখ থেকে উদ্যোক্তা কোয়েল পাখির ডিমে স্বাবলম্বি

শখ থেকে উদ্যোক্তা কোয়েল পাখির ডিমে স্বাবলম্বি

শখ করে কোয়েল পাখি পালন করতে গিয়ে আজ উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী মাহবুবুল আলম নাঈম। তার কোয়েল পাখির খামার থেকে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ডিম আসে। প্রতি মাসে সেই ডিম বিক্রি করে তিনি আয় করছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তার সফলতা দেখে কোয়েল পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার যুবকরা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের যুবক মাহবুবুল আলম নাঈম। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ হলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে উত্তর অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গার কৃষি ও খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে শখ করে ৩০০ কোয়েলের বাচ্চা সংগ্রহ করে গড়ে তোলেন খামার। লাভ ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে ১ হাজার কোয়েল দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন কোয়েল পাখির ব্যবসা। খামার দেয়ার পরে ঠান্ডার কারণে তার বেশ কিছু পাখি মারা যায়। এরপরও হাল ছাড়েনি নাঈম। অবশেষে খামার দেয়ার এক বছরে কোয়েলের ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির পাশেই নুরজাহান লাইভ স্টক হ্যাচারি অ্যান্ড ফার্ম নামে তার খামারে তিনটি টিনশেড ঘর রয়েছে। সেখানে প্রায় ৬ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। নাঈম ও তার পরিবারের লোকজন এগুলোর দেখাশুনা করছেন। এছাড়া আরও ৩ কর্মচারী রয়েছে খামার পরিচালনার জন্য। যার ফলে তাদেরও তৈরি হয়েছে একটি আয়ের উৎস। প্রতিনিয়ত এ খামার থেকে সংগ্রহ হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার ডিম। প্রতি পিস ডিম পাইকারি বিক্রি করছেন ৩ টাকা দরে। শুধু কোয়েল পাখিই নয় এর পাশাপাশি নাঈম পালন করছেন কিছু সংখ্যক সোনালী, লেয়ার ও টারকি মুরগি। খামারটি সব সময় পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত থাকে। এছাড়াও খুচরা বিক্রি করার জন্য রয়েছে তার? খামারের সামনে নিজস্ব দোকান। যেখানে কোয়েল পাখির ডিম, কোয়েল পাখি, বয়লার মুরগি ও গবাদি পশুর খাবারসহ ওষুধ বিক্রি করা হয়। খরচ বাদে এতে তার মাসে আয় হচ্ছে আড়াই লাখ টাকা। সফল কোয়েল খামারি মাহবুবুল আলম নাঈম বলেন, ২০১৭ সালে কোয়েল পালন শুরু করেছিলাম। ডিমের চাহিদা এবং মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় পরিবারের সহায়তায় পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল খামার গড়ে তুলি। এই খামারে প্রতিদিন পাখির জন্য চার বেলায় ১০০ কেজির মতো খাবার দিতে হয়। দিনে ২ বার ও রাতে ২ বার করে মোট ৪ বার স্টাটার ফিড ও কোয়েল ফিড দেই। বর্তমানে আমার খামারে থাকা সাড়ে ৩ হাজার কোয়েল পাখিই ডিম দেয়। বেশ ভালো লাভবান হচ্ছি। অনেকেই আমার খামার ঘুরে দেখছে এবং আমি অনেক যুবককে কোয়েল খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার দেখাদেখি অনেক শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেছে। ফার্মের কর্মচারী রায়হান হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ঢাকায় চাকরি করেছি এরপরে নাঈম ভাইয়ের এখানে চাকরি নিয়েছি। তার ফার্ম থাকার কারণে আমার চাকরির সুযোগ হয়েছে। কোয়েল পাখির পালনে অনেক লাভবান হওয়া যায় কারণ কোয়েল পাখিতে রোগবালাই কম হয়। মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নতুন উদ্যোক্তা রাহাত খান বলেন, নাঈম ভাইয়ের খামার থেকে ৫০টি কোয়েল পাখি নিয়ে একটি খামার শুরু করেছি। এরইমধ্যে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ডিম আমি বিক্রি করছি স্থানীয় বাজারে। আর আমার এই খামার পরিচালনার জন্য সব পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন নাঈম ভাই। স্থানীয় বাসিন্দা নেছার আহমেদ বলেন, আমাদের কলাপাড়ার গর্ব নাঈম ভাই। সে একজন সফল কোয়েল খামারি। আমরা তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পেয়ে থাকি। তার কাছ থেকে ১০০ কোয়েল পাখির বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি আমিও সফল হতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত