ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় নিহত ১১
সহসা হচ্ছে না পুতিন জেলেনস্কি বৈঠক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
রাশিয়ার সৈন্যদের প্রতিহত করতে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিতে না দিতেই রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনে তাদের হামলা জোরদার করেছে। রাজধানী কিয়েভসহ দেশজুড়ে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে কিয়েভের অনেক ভবন। রাশিয়ার এই হামলার প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। এমনি জটিল পরিস্থিতির উন্নতি সাহসা হচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির ঝিলেনস্কির সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। খবর বিবিসির। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় নেতা বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার তার ‘কোন আগ্রহ নেই। ইউক্রেনীয় নেতা ঝিলেনস্কির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অনেক আগেই পুতিনের সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সেগুলি মনে রাখা বা তাকে নির্বাচিত করা ভোটারদের স্মৃতিকে সতেজ করা কঠিন নয়। তিনি কখনই দনবাস সমস্যার সমাধান করেননি, তিনি মিনস্ক চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উপরন্তু, দেখা যায় যে, তিনি কখনই সেগুলো বাস্তবায়ন না করে বরং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।’ পেসকভ আরো বলেন, এসব কারণেই তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনা বন্ধ রেখেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি গ্রেট ব্রিটেনের ‘স্কাই নিউজ টিভি’ চ্যানেলকে জানান, তিনি পুতিনের সাথে শান্তি আলোচনায় আগ্রহী নন। জেলেনস্কি বলেন, পুতিন সামরিক অভিযান শুরু করার পর ভেবেছিলেন তার সঙ্গে ‘কেউ নেই।’ কিয়েভ পশ্চিমাদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ট্যাংক পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়ার পরদিন ক্ষুব্ধ হয়ে মস্কো এ ব্যাপক হামলা চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মস্কোর ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আকস্মিকতায় বেসামরিক লোকজন প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে বাধ্য হয়। ইউক্রেনের ধারাবাহিক অনুরোধের মুখে সম্প্রতি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনকে কয়েক ডজন অত্যাধুনিক আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাংক দিতে রাজি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কো ইউক্রেইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং ড্রোন হামলা চালায়। এর আগেও যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয়দের সফলতার পর মস্কো প্রতিবেশী দেশটির জ্বালানী অবকাঠামো লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে। ফলে কোটি কোটি মানুষ অন্ধকারে ডুবে যায়। অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র পানির সংকট।
সর্বশেষ হামলায় রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের আশেপাশে ১৫টিসহ ইউক্রেনজুড়ে ২৪টি ড্রোন হামলা চালায়। তবে তার সবগুলোই ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। রাশিয়া এবার তাদের আর্কটিকের বোমারু বিমান ব্যবহার করেও বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে মনে করছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। রাশিয়ার পাঠানো ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে ইউক্রেনের প্রায় সমগ্র অঞ্চলেই সাইরেনের শব্দ পাওয়া গেছে। কিয়েভের বিপুল সংখ্যক মানুষ দীর্ঘসময় ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনগুলোতে অবস্থান করতে বাধ্য হয়।
১১টি অঞ্চল লক্ষ্য করে হওয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১১ নিহত এবং আরও ১১ জন আহতের পাশাপাশি ৩৫টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বিভাগের একজন মুখপাত্র। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ওপর রুশ হামলার ধারাবাহিকতায় এবারও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শেমেহাল। ক্রেমলিন বলেছে, অত্যাধুনিক পশ্চিমা ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ১১ মাস ধরে চলা ইউক্রেন সংঘাতে ক্রমেই ‘সরাসরি সম্পৃক্ত’ পক্ষ হয়ে উঠছে বলেই মনে করছে তারা। তবে ওয়াশিংটনসহ কিয়েভের মিত্ররা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অক্টোবর থেকে, রাশিয়া ইউক্রেন জুড়ে বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ওপর নিয়মিত হামলা শুরু করেছে, যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি হওয়ায় মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে। ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রী জার্মান গালুশচেঙ্কো ‘ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করার’ জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন। হামলার কারণে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনার সফর বিলম্বিত হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ ১৪টি লেপার্ড ২ ট্যাঙ্ক পাঠানোর সম্মতি দেয়ায় পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুধবার বলেছে, তারা ইউক্রেনে ৩১টি আব্রামস ট্যাঙ্ক সরবরাহ করবে। এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব সংগ্রহে থাকা লেপার্ড সরবরাহের পথ খুলে দিয়েছে। ব্রিটেনের সরকার বলেছে, তারা মার্চের শেষে ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে তারা প্রশিক্ষণ শুরু করবে। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যেই ইউক্রেনকে আর্টিলারি থেকে প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যন্ত সমস্ত কিছু পাঠিয়েছে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বৃহস্পতিবার বলেছেন, বার্লিনের প্রতিশ্রুতি দেয়া লেপার্ড ট্যাঙ্কগুলো ‘মার্চের শেষের দিকে অথবা এপ্রিলের শুরুতে’ ইউক্রেনে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, জার্মানি লেপার্ড ট্যাঙ্কের যুদ্ধ সম্পর্কে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পর এবার ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক চারটি ‘লেপার্ড-২’ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা আনন্দ।প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা বলেন, এই সহায়তা ইউক্রেনীয় সেনাদের গতি বাড়াবে এবং বেঁচে থাকার সুবিধা দেবে। পাশাপাশি কৌশলগত সুবিধা দেবে এই ট্যাংক। ইউক্রেনের আরও বেশি অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে এটি। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাস্ত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে বারবার উন্নত প্রযুক্তির ট্যাংক চেয়ে আসছিল কিয়েভ। অনেক নাটকীয়তার পর ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাতে রাজি হয় জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রও জেলেনস্কির সরকারকে ৩১টি শক্তিশালী ‘আব্রামস’ ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা। কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা বলেন, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ট্যাংকগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোতায়েন করা হবে। শুধু তাই নয়, এসব উন্নত ট্যাংক এবং এর সরঞ্জাম পরিচালনার জন্য ইউক্রেনীয় সেনাদের সহায়তায় কিয়েভে কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিশ্রুত ট্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এসব ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণ সহজ কাজ নয়। কিন্তু যুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য এই ট্যাংক টিকিয়ে রাখার বিকল্প নেই। ইউক্রেনকে আরও কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে জার্মানি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আলোচনা করবো আমরা। কানাডা সরকারের এমন সহায়তার ঘোষণায় টুইট বার্তায় জাস্টিন ট্রুডোর সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ বলেন, আমাদের বন্ধু এবং সহকর্মী অনিতা আনন্দকে ধন্যবাদ। আপনাকে এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ।