কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তীব্র প্রতিবাদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেমফিস পুলিশের বিশেষ ‘স্করপিয়ন ইউনিট’ স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসে পুলিশি নির্যাতনে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ যুবক টায়ার নিকোলস। নির্মম সেই নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ করে মেমফিস নগর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় স্থানীয় ৫ পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। বিবৃতি দিয়ে স্করপিয়নের বাকি ইউনিটগুলোও ভেঙে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে মেমফিস পুলিশ বিভাগ। নিকোলসের পরিবার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এটিকে তারা টায়ার নিকোলসের মৃত্যুর জন্য সঠিক ও মেমফিসের সব নাগরিকের জন্য ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছে। মেমফিষ পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটটি ৫০ সদস্য দ্বারা গঠিত এবং তাদের কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট এলাকায় অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনা। ২৯ বছর বয়সি নিকোলস মারা যাওয়ার পর ওই পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মাত্রার খুন, অসদাচরণ ও নিপীড়নের জোরালো অভিযোগ ওঠে। ফলে এই ইউনিট বাতিল করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে মেমফিস পুলিশ বিভাগ বলেছে, সবার স্বার্থে ওই ইউনিটটিকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা হোক। গত ৭ জানুয়ারি নিকোলসকে নির্যাতনের এক ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর শহরে শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এই ইউনিটের কর্মকর্তারা ওই দিন ২৯ বছর বয়সি টায়ার নিকোলসকে সড়কে ফেলে পেটাচ্ছেন ও লাথি মারছেন এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয় মেমফিসের মানুষ। গ্রেপ্তারের তিন দিন পর তার মত্যু হয়। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে নিকোলসকে গ্রেপ্তার করেছিল স্করপিয়ন পুলিশ। গাড়ি চুরি, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের অপরাধ দমনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০২১ পুলিশের স্করপিয়ন ইউনিট চালু করা হয়েছিল। নিকোলসকে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গত সপ্তাহে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে নেয়া হলেও পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশের নির্যাতনের পর কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ টায়ার নিকোলসের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশটির মানুষ। এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের আরেক ব্যক্তির পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনাটি। জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগ এনে সে বছরের ২৫ মে তাকে আটক করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ। আটকের পর ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না বলে জানান তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিকোলসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়েছে অঙ্গরাজ্যের মেমফিস শহরে। নিকোলসের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিওতে উঠে এসেছে টায়ার নিকোলসের ওপর নির্যাতনের চিত্র। এ ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ এবং খুবই কষ্ট পেয়েছেন। নিকোলসের মৃত্যু ঘিরে চলমান বিক্ষোভ সংঘাতে মোড় নিতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাইডেন। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। টায়ার নিকোলসের মা ও সৎবাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
১০ থেকে ১৫ মিনিটের ওই ফোনালাপের বিষয়ে তিনি বলেন, নিকোলাসের মা রোভন ওয়েলস অবশ্যই বড় বেদনার মধ্যে রয়েছেন। ছেলের মৃত্যুর জন্য তাঁকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। নিকোলসের মাও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কোনো সংঘাত চান না। বিক্ষোভ যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সচেতন হোয়াইট হাউসও। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্যঁ-পিয়েরের ভাষ্যমতে, খারাপ পরিস্থিতি দেখা দিলে তা সামলানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি বড় শহরের মেয়রদেরও দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।