নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আগামীকাল অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের ছয়টি শূন্য আসনের উপনির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্নের জন্য সব আয়োজন শেষ করা হয়েছে। এজন্য দেড় গুণ ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সবাই যাতে নির্বেঘেœ ভোট দিতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত ছয়টি আসনে আগামীকাল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন।
রাশেদা সুলতানা বলেন, ছয়টি আসনেই ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এজন্য যে পরিমাণ দরকার তার দেড়গুণ মেশিন দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পর্যাপ্ত মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য যা যা করা দরকার আমরা সব আয়োজন করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতগুলো দপ্তর আছে সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা যখন ছিল না, তখনো কিন্তু ভালো নির্বাচন হয়েছে। আন্তরিকতা ও সততা নিয়ে কাজ করতে পারাটা একটা বড় শক্তি। আমি নিজে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গেলাম, বগুড়া-২ আসনে গিয়েছি, ঠাঁকুরগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান গিয়েছেন। আমাদের দুই জনেরই পর্যবেক্ষণ হচ্ছে একটা সুন্দর, শক্ত সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা দেখেছি। মাঠ প্রশাসন বলেছে, আপনারা চিন্তা করবেন না। কমিশন যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবেই নিরপেক্ষ একটা সুন্দর নির্বাচন করব। ওনারা আমাদের এভাবে বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি একপ্রাণ হয়ে সবাই কাজ করলে ভালোই নির্বাচন হবে। এটাই আমাদের শক্তি।
প্রথমবারে মতো আপনাদের কমিশন সিসি ক্যামেরা ছাড়া নির্বাচন করছেন, এতে তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সিসি ক্যামেরা ছাড়া কী হয়, এটাও একটা তুলনামূলক পরীক্ষা হতে পারে। সাবেক এই জেলা জজ বলেন, আমাদের কেবল নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়ে কাজ, তা নয়। সাংবাদিকদের নিয়েও আমরা কাজ করি। আপনারাও যদি একটু সচেতন থাকেন। সবার হাতে মোবাইল। তথ্য পাওয়াটা বোধ হয় কঠিন না। তথ্য পেলে সেটা যদি নির্ভরযোগ্য হয় আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়তো নিতেই পারি। ক্ষমতা তো দেয়াই আছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার প্রসঙ্গে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সিসি ক্যামেরা করব কি করব না, সেই সিদ্ধান্ত নিইনি। আইনে সিসি ক্যামেরার কথা বলা নেই। আমরা ভাবলাম করে দেখি না কী হয়, তাই ব্যবহার করেছি। এছাড়া সংলাপের সময় বিভিন্ন মহল থেকে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের সুপারিশও ছিল।
৩০০ আসেনর সিসি ক্যামেরার ম্যানেজমেন্ট, বাজেট এই নিয়ে আলোচনা করে আসছি। করতে পারব কি না, এটা নিয়ে এখনই বলতে পারব না। কত বাজেট আনতে পারব, কী পদ্ধতিতে যাবে- এমন না জেনে আসলে বলা যাবে না। এখনো আমরা মনে করছি যে সিসি ক্যামেরা হলে ভালো হয়। আমরা ভালোটার দিকেই যেতে চাইব। তবে যেহেতু আর্থিক সামর্থ একটা বড় জিনিস। তাই কমিশন চাইলেই পারবে না। পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দেব। আমাদের শতভাগ ইচ্ছা আছে। ভোট ভালো করার জন্য যা যা দরকার, সবই আমরা করতে চাই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৫০ থেকে ৭০ আসনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে :
ইসি বেগম রাশেদা সুলতানা জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ থেকে ৭০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করতে পারে কমিশন। এ ক্ষেত্রে হাতে থাকা ইভিএম মেশিনের কতটি ব্যবহার উপযোগী তার ওপর নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে চেয়েছিল ইসি। তবে আমাদের হাতে যেসব ইভিএম আছে, তা দিয়েই ভোট করব। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক নির্বাচন কমিশন দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কিনেছিল বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে। সেই মেশিনগুলো দিয়েই গত কয়েকটি জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন, উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছু কিছু মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের জন্য কতগুলো ব্যবহার করা যাবে, তাও পরীক্ষা করে দেখছে কমিশন।
সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের স্বার্থে ২ লাখ নতুন মেশিন কেনার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিতে সরকারকে প্রস্তাব করেছিল ইসি। তবে, গত ২২ জানুয়ারি আর্থিক সংকটের কারণে সেই প্রকল্প প্রস্তাবটি আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এক্ষেত্রে চলমান ইভিএম মেশিন দিয়েই যতটা আসনে সম্ভব ভোট করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তবে, কতটি আসনে এ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে, তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি।