আশিকুল ইসলাম। একটি বেসরকারি অ্যাগ্রো কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে তার নিজে কিছু করার ইচ্ছায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ শুরু করেন। ধান, গম ও প্রচলিত শষ্যের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফল চাষ করছেন তিনি। এ বছর ড্রাগন, কমলা, মালটা, পেয়ারা, কুলসহ লিচুর চাষ করেছেন। ইচ্ছা ও মনোবল থাকায় নানা প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। বুক ভরা আশা নিয়ে বলছেন, ড্রাগন মানে ডলার ব্যাংক।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া-চরপাড়া এলাকার কৃষক আশিকুল ইসলাম। তিনি এখন ওই এলাকার একজন মডেল কৃষক। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই করছেন আধুনিক ফসলের চাষাবাদ।
বিদেশি ফল ড্রাগন। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় তিনি গতবছর ১ বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ শুরু করেছেন। এ বছর আরও এক বিঘাতে নতুন করে চারা রোপণ করেছেন ড্রাগনের। প্রথম বছরেই ফল ধরেছিল গাছে। এ বছর আরও ভালো ফলনের আশা করছেন এই মডেল কৃষক।
আশিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে চিরকালই চাষাবাদ ভালো লাগে। তবে চাকরি করতাম, তাই চাষাবাদ করতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখেছি যে, ড্রাগন ফল চাষ বেশ লাভজনক। অনেক দিন ধরে এই আবাদ করা সম্ভব। তবে খরচ একটু বেশি। একবার রোপণ করলে অনেক বছর ধরে এর ফল পাওয়া সম্ভব। চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখেছি, কৃষকের সাথে কথা বলেছি। পরে আমি ঠিক করি, আমিও ড্রাগন চাষ করব। তাই আমি এই ফলের চাষ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ১ বিঘা জমিতে আমি পিংক রোজ নামের ড্রাগনের চাষ করি। এ বছর নতুন করে আরও ১ বিঘা জমিতে রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। ১ বিঘা জমিতে ২২০টি ড্রাগনের খুঁটি দেয়া আছে। প্রতিটি খুঁটিতে তিন থেকে চারটি গাছ দেয়া রয়েছে।
আশিকুল বলেন, ড্রাগনের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ ভালো। এর সাথে যদি এটেল মাটির মিশ্রন থাকে তাহলে আরও ভালো হয়। ড্রাগনের জন্য চারা বাইরে থেকে কেনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপণ করলে ওই গাছ থেকেই কাটিং করে চারা তৈরি করা যায়। খুঁটি দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। সেই সাথে বাগানও সুন্দর হয়।
আশিকুল আরও বলেন, ড্রাগন চাষের খরচ অন্য ফসলের তুলনায় একটু বেশি। ১ বিঘায় আমার ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি এবছর ৮০০ থেকে ৯০০ কেজি ড্রাগন পাব। সেই সাথে আগামী বছর আরও বেশি ফলন পাবো। এ বছর যে ড্রাগন হবে, সেখানে ৭০ শতাংশ খরচ উঠে আসবে আশা করি। পরের বছর দ্বিগুণ ফলন দেবে। ড্রাগনকে ভালোমতো যত্ন করলে ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ফল দেয়।
আশিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের নিত্য-নতুন ফসলের আবাদ করতে হবে। যে ফসলগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত না, তবে ভবিষ্যতে প্রচলিত হবে- এমন ফসল চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। এটি অধিক লাভজনক একটি চাষ। তবে এটি বিক্রির একটা নিশ্চিয়তা পেলে কৃষক আরও লাভবান হবে এই ড্রাগন চাষে।
মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাড়ারা এলাকার কৃষক আলিমুল রেজা সুমন জানান, আমি এ বছর যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহায়তায় ড্রাগনের চাষ শুরু করেছি। এই ফলটার বাজারে চাহিদা ভালো আর এই এলাকায় চাষ হয় না বললেই চলে। তাই আশা করছি ভালো লাভবান হব।
ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর এলাকার মুনছুরা খাতুন এবছর প্রথম ড্রাগন চাষ করছেন। তিনি জানান, ড্রাগন ফল সুসাধু এবং বাজার দর ভালো। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহযোগিতায় আমি এ বছর ভিয়েতনাম রেড নামের জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। যদি ভালো ফলন পায় তাহলে আর্থিকভাবে বেশ ভালো লাভবান হব। সেই সাথে এ ড্রাগনের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মামুন জানান, ড্রাগন বিদেশি ফল হওয়া সত্ত্বেও আমাদের এলাকায় চাষ উপযোগী হওয়ায় কৃষক এ ফল চাষে বেশ আগ্রহী। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের এ ফল চাষে পরামর্শ প্রদান করে থাকি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কুষ্টিয়াসহ ছয়টি জেলায় ড্রাগন ফল চাষ সম্প্রসারণে আমরা কৃষকের মধ্যে প্রদর্শনী দিয়েছি। সেই সাথে উচ্চ মূল্যের ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এবং উচ্চ মূল্যের ফল ও সবজি চাষে কৃষক ও কৃষানিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।