বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হিসেবে ধরা হয় মালয়েশিয়াকে। দফায় দফায় এই বাজার বন্ধ হলেও খুলেছে অবশেষে। তবে কাক্সিক্ষতভাবে কর্মী পাঠানো যায়নি সেখানে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নতুন সমঝোতা হলেও সেই তুলনায় কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি। কিছু ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ এই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন। এর জট খুলতে আর এই শ্রমবাজারে গতি আনতে ঢাকায় একদিনের সফরে এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার সফরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় এসে পৌঁছান সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশীয় হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল ঢাকায় গতকাল শনিবার সেনাকল্যাণ ওভারসিজ এপ্লয়মেন্ট সার্ভিস লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন।
আজ রোববার সকালে শ্রমবাজার ইস্যুতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ শেষে তিনি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শ্রমবাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়া সেদেশে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও রিক্রুটিং এজেন্সি অনুমোদনের কথাও আলোচনায় থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই শ্রমবাজার নিয়ে নানা রকম তৎপরতা ছিল। কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রেও সেভাবে লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি। তাই পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার সরকার প্রস্তাবে রাজি হলে সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনে সমঝোতার শর্ত সংশোধনের ইস্যুতেও আলোচনা হবে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দীর্ঘদিন ধরেই উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা। তাদের দাবি, বৈধ লাইসেন্স যাদের আছে তাদের সবাইকে এই শ্রম বাজারে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বায়রা। সংগঠনটির মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান জানান, অন্যান্য দেশ থেকে যে প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ করে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক।
অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর গত আগস্ট থেকে কর্মী নিচ্ছে দেশটি। পাঁচ মাসে প্রায় আড়াই লাখ কর্মীর চাহিদাপত্র এলেও ৫০ হাজার বাংলাদেশি যেতে পেরেছেন। প্রথমে ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়া হলেও পরে আরো ৭৫ এজেন্সিকে যুক্ত করা হয়। কর্মীপ্রতি ৭৮ হাজার ৯৮০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হলেও এজেন্সিগুলো চার থেকে পাঁচ গুণ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যুতে সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে গতি আনতে এই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা।
এর আগে ৩০ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা যে কর্মী পাঠাই, এগুলোতে অনেক সময় উল্টাপাল্টা কাজ হয়। তিনি আসছেন এগুলো ঠিক করার জন্য। মোমেন বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, তিনি আসার পর মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে যে কার্টেল (মধ্যস্বত্বভোগী চক্র) আছে, সেগুলো দূর হবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা হয়তো স্বল্প খরচেই মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। ‘কার্টেল’ দূর করতে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।