মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে এ কথা বলেন তিনি। বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ। শুধু হাসপাতাল তৈরি করলে আর কিছু মেশিন কিনে দিলেই চিকিৎসা হয়ে যাবে না। চিকিৎসা সেবা মূলত নির্ভর করে ডাক্তার-নার্সদের ওপর। এই বিষয়গুলোতে ভবিষ্যতে আর ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশে ৬০-৭০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এরমধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু হয় ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকে। দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আছে প্রায় ২০ লাখ। প্রতিবছর ১ লাখ মানুষের রোগটিতে মৃত্যু হয়। আরও দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বাস্তব চিত্র আরও খারাপ। দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই স্বল্প জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যানসার রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে এতে বৈষম্যও রয়েছে। অধিক ব্যয় হওয়ায় দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা করাতে পারে না। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয় বলে বড় অংকের অর্থ খরচ হয়। এ জন্য আমরা চিকিৎসায় বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। আট বিভাগে ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি সেবা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ধূমপানে ক্যানসার বেশি হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, খাবারে দূষণ ক্যানসারের বড় কারণ। ক্যানসার এমন রোগ, কোনো বয়স বা গোত্র রক্ষা পায় না। দেশে ক্যান্সারের ভালো চিকিৎসা আছে, তবে প্রাথমিক অবস্থায় করতে হবে। তাহলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ক্যানসার হাসপাতালে কী পরিমাণ রোগীর চাপ থাকে আমি দেখি। পাশেই আমার অফিস। চিকিৎসক নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। সীমিত সম্পদের মধ্যেও চিকিৎসক নার্সরা ক্যানসার হাসপাতালে কাজ করছেন। এ জন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে রোগীদের সেবায় আরও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। রোগীদের নিজের আত্মীয় ভেবে চিকিৎসা দিতে হবে। সরকার ক্যানসার চিকিৎসায় গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যানসারের চিকিৎসা ও শনাক্তকরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৮টি বিভাগে ৮টি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ক্যান্সার শনাক্তে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রাখা হবে। এ সময় সম্মিলিত উদ্যোগে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন বলেও আশাপ্রকাশ করেন স্বাস্থ্যের ডিজি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।