সুসংবাদ প্রতিদিন
কুল চাষে ভাগ্যবদল
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
চাকরির আশায় না থেকে কুল চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন আজিজুল। বিদেশি জাতের কুল চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন রাজবাড়ীর তরুণ উদ্যোক্তা আজিজুল হাকিম। পড়ালেখা শেষ করে চাকরির আশায় বসে না থেকে শুরু করেন কৃষি কাজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজের এক একর জমিতে শুরু করেন বিদেশি জাতের কাশ্মিরী আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল ও থাই আপেল কুলের মিশ্র ফলের বাগান। কুল চাষ করেই এখন বদলে গেছে আজিজুলের জীবন। তার পুরো বাগানজুড়ে এখন লাল-সবুজের সমারোহ।
তরুণ উদ্যোক্তা মো. আজিজুল হাকিম রাজবাড়ী পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডের নতুন বাজার বিসিক এলাকার মো. জামাল উদ্দিন মিয়ার ছেলে। তরুণ উদ্যোক্তা আজিজুলের এই সফলতায় আরও চাষি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই জাতের কুল চাষে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি জাতের এই কুল চাষের উপযোগী হওয়ায় সাফল্য পেয়েছেন আজিজুল। আজিজুলের মতোন উপজেলার অনেক চাষি কুল চাষ করে ভাগ্য বদলেছে। আগামীতে এই অঞ্চলে কুল চাষ আরও বাড়ার আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক একর জায়গার ওপর কুল বাগান। প্রতিটি কুল গাছ প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা। প্রতিটি কুল গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল-সবুজ রঙের কুল। কুলের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছের ডাল। সেই সব ডালগুলো আবার বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেয়া হয়েছে। সুস্বাদু বাহারি রংয়ের কুল উদ্যোক্তা আজিজুল নিজেই গাছে থেকে পারছেন কুল। পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারিপাশে মশারী জালের বেড়া দেওয়া হয়েছে। শীতের মিষ্টি রোদ পড়ে রঙিন বরইগুলো চকচক করছে। বল সুন্দরী ও আপেল কুলের উপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো। খেতেও খুব সুস্বাদু। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চফলনশীল বিদেশি জাতের কুল চাষ হচ্ছে। বাজারে বল সুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মিরী, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট বড় অনেক বাগান হয়েছে। চলতি বছরে রাজবাড়ী জেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, গোয়ালন্দে ৪ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ৫ হেক্টর, কালোখালিতে ১৫ হেক্টর ও পাংশায় ৬ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তা আজিজুল হাকিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে কৃষি নিয়ে কিছু করার চিন্তাভাবনা করি। তাই এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও পরামর্শ নিয়ে বিদেশি জাতের কুল বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। পরে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কুল চাষের জন্য এক দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের এক একর জমি কুল চাষের জন্য প্রস্তুত করি। পরবর্তীতে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রায় ২০০টি আপেল কুল, কাশ্মিরী কুল ও বল সুন্দরী কুলের চারা এনে রোপণ করি। তিনি আরও বলেন, চারা রোপণ করার পর আমি নিজেই বাগানের পরিচর্যা করতাম। রোপনের ৯ মাসের মাথায় সব গাছে ভালো ফলন এসেছে। ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে বিক্রি শুরু করি। খুব অল্প সময়ে ভালো লাভজনক ফল কুল। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ থেকে কেজি ফল পাব। প্রতি কেজি আপেল কুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি ও বল সুন্দরী কুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আজিজুল হাকিম বলেন, আশা করি এই বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার কুল বিক্রি হবে। প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ১ একর জমির ওপর বাগান করি। সামনে বছর এই বাগানে আরও বেশি ফলন হবে। এছাড়াও আগামীতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার চিন্তাভাবনা রয়েছে আমার। স্থানীয় যুবকরা বলেন, আজিজুল শিক্ষিত ছেলে। সে চাকরির আশায় বসে না থেকে উদ্যোক্তা হয়েছে। কুল চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছে। তার সফলতা দেখে আমরাও কুল চাষে উৎসাহিত হয়েছি। তার থেকে পরামর্শ নিয়ে আমরাও এখন উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করব। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রসূল বলেন, রাজবাড়ীর চাষিরা এখন কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ বছর রাজবাড়ীতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে কুলের চাষ হয়েছে। শুধু সদর উপজেলাতে ২৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ায় কুল চাষ দিন দিন বাড়ছে।