বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোসলেম উদ্দিন আহমেদ রোববার রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ারে হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার প্রথম নামাজে জানাজা গতকাল বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিইস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাযার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হুইপ শামসুল আলম চৌধুরী ও আতিকুল ইসলাম আতিকসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। মরহুমের পৈতৃক নিবাস চট্রগ্রামের বোয়ালখালীতে দ্বিতীয় ও চট্টগ্রামে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে আজ চট্টগ্রাম নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ মাজারস্থ কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হবে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে দূরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ কন্যাসহ বহু আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেনক্রিয়াটাইটিসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। করোনার সময়ই তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু নিয়েই রাজনীতির মাঠে সরব ছিলেন। এর আগে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে কয়েক দফা চিকিৎসা নেন এবং সূস্থতা বোধ করেন। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মোছলেম উদ্দিন আহমদ ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের চট্রগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ শাখার সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি বেশ কয়েক বছর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম শহর শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বহু সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি ১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মোছলেম উদ্দীন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পটিয়া থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ নির্বাচন করে অল্প ভোটে পরাজিত হন। পরে মাঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ নিবাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওয়ামী দলীয় সাংসদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।